মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি –
মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির স্ত্রী, সাধারণ সম্পাদকসহ কতিপয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জমি দখল, টেন্ডারবাজি ও অবৈধ বালু মহল মাদক ব্যবসার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করার নানা অপকর্ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
উল্লেখিত ব্যক্তিদের দুদক সূত্র জানায়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী সোহানা তাহমিনা, সাধারণ সম্পাদক শেখ লুৎফর রহমান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আনিস উজ্জামান, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফসার উদ্দিন ভূঁইয়া আফসু, মিরকাদিম পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম শাহিন, পঞ্চসার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা ও মুন্সিগঞ্জের রামপাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাচ্চু শেখের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, জমি দখল, টেন্ডারবাজি, অস্ত্র ব্যবসার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের নানা অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ লুৎফর রহমান দলের পদ-বাণিজ্য ও জমি দখল করে বিক্রি করে কয়েক বছরে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফসার উদ্দিন ভূঁইয়া আফসু ১০ বছরে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। দেশি-বিদেশি ব্যাংকে তার ও স্ত্রীর নামে শত কোটি টাকা এবং ঢাকার শনির আখড়ায় ৫০ কোটি টাকার ৩০ শতাংশ জমিতে একটি ৫ তলা বাড়ি রয়েছে।
এছাড়া উত্তরায় মেয়ের নামে প্রায় ৬০ কোটি টাকার বিলাসবহুল দুটি ফ্ল্যাট, মালিবাগে ৩ কোটি টাকার একটি ফ্ল্যাট এবং মুন্সিগঞ্জ শহরের মানিকপুরে রয়েছে তার দুটি বাড়ি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৫ লাখ থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত দলের মনোনয়ন বিক্রি করে অবৈধভাবে উপার্জন করেন তিনি।
আর মুন্সীগঞ্জ জেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা পুরান ঢাকায় বিএনপি আমলে অস্ত্র নিয়ে ধরা পড়েন। অনেক হত্যা মামলারও আসামি তিনি। মালয়েশিয়ায় তার দুটি বাড়ি এবং ঢাকার উত্তরাতে স্ত্রীর নামে অবৈধভাবে একাধিক ফ্ল্যাটসহ রয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
একই সঙ্গে দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে মুন্সীগঞ্জ রামপাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাচ্চু শেখ ঢাকার বাদামতলী, বনানী ও গুলশানে ৪টি বাড়ি কিনেছেন। দুই স্ত্রীর মাধ্যমে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়।
মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর মোহাম্মদ মহিউদ্দিন গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে গেছেন। তবে ৪ আগস্ট মুন্সীগঞ্জে শিক্ষার্থীদের ওপরে সশস্ত্র হামলায় তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় তাদের মুখ্য ভূমিকা রয়েছে বলে গোয়েন্দা সদস্যদের হাতে তথ্য-উপাত্ত রয়েছে এ পরিস্থিতিতে মহিউদ্দিন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের গতিবিধি সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রেখেছেন গোয়েন্দা সংস্থার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। সর্বশেষ গোয়েন্দা তথ্য বলছে,এ দম্পতি এখনও দেশেই অবস্থান করছেন। বিদেশে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। নিরাপদে থাকতে ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করছেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মুন্সীগঞ্জ শহরের কৃষি ব্যাংক চত্বরে গুলিতে নিহত কয়েক জনের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার দলের ১০১৪ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কয়েকটি হত্যা মামলা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় কয়েকটি মামলা করা হয় বলে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারুনুর রশিদ জানান।