![](http://trustnews24.com/wp-content/uploads/2023/05/prothomalo_import_media_2018_12_02_1f7eb6d6c06895f4d3301e2220dff0b4-5c034325be141-1024x684.webp)
মার্কিন বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল। বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্র্যান্ড। ব্র্যান্ড ফাইন্যান্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ ও ২০২১ সালেও অ্যাপল ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড। যদিও ২০২৩ সালে অ্যাপলকে টপকে শীর্ষ স্থান দখলে নিয়েছে অ্যামাজন।
![](http://trustnews24.com/wp-content/uploads/2023/05/download-5.jpg)
বর্তমানে অ্যাপলের মূলধন ২৯৭.৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু কীভাবে মার্কিন এই প্রযুক্তি কোম্পানি অন্যতম সেরা ব্র্যান্ডে পরিণত হল? এমন প্রশ্ন প্রায়ই দেখা যায়। সেই সঙ্গে আরও একটি প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসে- কতদিন এই সাম্রাজ্য ধরে রাখতে পারবে অ্যাপল?
প্রযুক্তি পণ্য তৈরিতে অ্যাপল দুর্দান্ত, এতে কোনও সন্দেহ নেই। তবে একই সঙ্গে এটিও সত্য যে, অ্যাপলের শেয়ারের দাম হু হু করে বেড়ে যাওয়ার পেছনে সবচেয় বড় চালক হচ্ছে- চীনের সঙ্গে সংস্থাটির সিইও টিম কুকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।
বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি বিষয়ক দৈনিক ‘ফিন্যান্সিয়াল টাইমস’ একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে, যা লিখেছেন ‘জে নিউম্যান’।
জে নিউম্যান হলেন- একজন মার্কিন ঔপন্যাসিক এবং ইলিয়ট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশনের প্রাক্তন হেজ ফান্ড পোর্টফোলিও ম্যানেজার, যিনি ইতিহাসের অন্যতম উল্লেখযোগ্য হেজ ফান্ড ট্রেডের নেতৃত্ব দিয়েছেন। কালো টাকা ও বৈশ্বিক রাজনীতি নিয়ে তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘আন্ডারমানি’ ২০২২ সালে প্রকাশিত হয়।
‘ফিন্যান্সিয়াল টাইমস’ এর প্রবন্ধে ‘জে নিউম্যান’ অ্যাপলকে একটি চীনা কোম্পানি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এর পেছনে তিনি যুক্তি হিসেবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাথে অ্যাপলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে দেখিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, চীনে পণ্য উৎপাদন এবং বিক্রয়ের ক্ষেত্রে দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির সাথে অ্যাপলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক মার্কিন কোম্পানিটিকে ঈষর্ণীয় অস্তিত্ব দিলেও, বিভিন্ন ভীতিকর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে আপনি আঁতকে উঠবেন!
প্রতিবেদেনে বলা হয়, “গত কয়েক সপ্তাহে, মার্কিন অস্ত্র কোম্পানি লকহিড মার্টিন ও রেইথনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে চীন। মার্কিন চিপমেকার মাইক্রনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দেশটি। ডিউ ডিলিজেন্স ফার্ম মিন্টজ গ্রুপে অভিযান চালিয়ে সংস্থাটির কিছু কর্মীকেও গ্রেফতার করেছে তারা। আটক করেছে অ্যাস্টেলাস ফার্মার একজন সিনিয়র সদস্যসহ ১৭ জাপানি ব্যবসায়ীকে। লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক পেশাদার পরিষেবা নেটওয়ার্ক কোম্পানি ডেলয়েটের বিরুদ্ধে রেকর্ড জরিমানা ধার্য করেছে এবং সাধারণ ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে কভার করার জন্য দেশটি তার গুপ্তচরবৃত্তি আইন সংশোধন করেছে।
বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত চীন উন্নয়ন ফোরামে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা এর চেয়ে বেশি উদ্দীপিত হতে পারি না, যা (সম্পর্ক) অ্যাপল ও চীন… এক সঙ্গে গড়ে তুলেছে। আর তাই এটি একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে রূপ নিয়েছে।”
বেইজিংয়ের অ্যাপল ফ্লাগশিপ স্টোরে চীনারা তাকে দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। কিন্তু, বস কে? তা তাকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য চীনের রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত ‘টুইটার সংস্করণ’ ওয়েইবো ও টিকটকের প্রধান শৌ জি চিউ-এর ভিডিওগুলোর সাথে তার উষ্ণ স্বাগত জানানোর ভিডিওকে পাশাপাশি স্থাপন করেছে। এমনকি চীনের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুয়া চুনয়িংও এতে যোগ দিয়েছেন।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের একটি প্রতিবেদনের বরাতে জে নিউম্যান তার প্রবন্ধে দাবি করেছেন, “গত ২০ বছরে অ্যাপলকে চীনের আরও গভীরে ঢুকিয়েছেন সিইও টিম কুক। ২০১৬ সালে চীনের অর্থনীতি, কর্মশক্তি এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতায় ২৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার জন্য অ্যাপলের সঙ্গে একটি গোপনীয় চুক্তি হয়। এরপরই আইফোন বিশ্বব্যাপী সেরা বিক্রেতা হয়ে উঠে। বাস্তবে, বর্তমানে অ্যাপল যতটা না আমেরিকান, তার চেয়ে বেশি চীনা কোম্পানি।”
ওই প্রবন্ধে আরও বলা হয়, “অ্যাপলের আয়ের প্রায় পঞ্চমাংশ আসে চীনে বিক্রয় থেকে। বৃহত্তর চীন তথা হংকং, ম্যাকাও, তাইওয়ান এবং চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে শুধু ২০২২ সালেই কোম্পানিটির মুনাফা এসেছে ৩১.২ বিলিয়ন ডলার, যদিও চীনে আয়ের অধিকাংশ নগদ অর্থই দেশটির বাইরে নেওয়া অসম্ভব বলে মনে করা হয়, অথচ এটি অ্যাপলের মোট আয়ের একটি বড় অংশ।
অ্যাপল চীনকে নগদ অর্থ ও বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির চেয়ে বেশি কিছু সরবরাহ করে থাকে। অ্যাপল ব্র্যান্ডটি দমনমূলক, স্বৈরাচারী অবস্থা এবং নমনীয়তার ক্ষেত্রে চীনকে সিসিপি (কনডাক্ট, কালচার ও পিপল) এর মতো উদ্দেশ্যগুলো হাসিলে সমর্থন দেয়। যখন এসব ক্ষেত্রে চীনের মুখোমুখি হয়, তখন অ্যাপলের কাছে না বলার কোনও সুযোগই থাকে না।
প্রবন্ধে কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হয়, যার মধ্যে অন্যতম:
১. এইচকেম্যাপ ডট লাইভ-কে নিষিদ্ধ করেছে অ্যাপল। এইচকেম্যাপ হল- হংকংয়ের একটি মানচিত্র বিষয়ক অ্যাপ, যা সেখানকার বিক্ষোভকারীরা পুলিশের গতিবিধি ট্র্যাক করতে ব্যবহার করতেন। কিন্তু এটি অনুমোদনের মাত্র কয়েকদিন পরই তা বন্ধ করে দেয় অ্যাপল। ওই সময় অ্যাপল সংবাদসংস্থা রয়টার্সের কাছে দাবি করেছিল যে, অ্যাপটি পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালানোর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
২. সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা সিসিপির সমালোচনামূলক লিফলেট ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ‘এয়ারড্রপ’ ব্যবহার করার পরে চীনে আইফোনে ফাইল শেয়ারিং সীমিত করে অ্যাপল। এই লিফলেট আংশিকভাবে বেইজিংয়ের এক ব্যক্তি দ্বারা অনুপ্রাণিত, যিনি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে অপসারণের জন্য ব্যানার ঝুলিয়েছিলেন।
৩. ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী এবং বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছ থেকে ব্যবহারকারীর ওয়েব ব্রাউজিংকে অস্পষ্ট করার জন্য ডিজাইন করা অ্যাপলের নতুন গোপনীয়তা বৈশিষ্ট্য (ফিচার) চীনে পাওয়া যায় না।
৪. অ্যাপলের চাইনিজ অ্যাপ স্টোর থেকে বিদেশি নিউজ আউটলেট, গে ডেটিং পরিষেবা এবং এনক্রিপ্ট করা মেসেজিং অ্যাপসহ বিভিন্ন ধরনের ১০ হাজারেরও বেশি অ্যাপ উধাও হয়ে গেছে। এছাড়াও ব্লক করে দেওয়া হয়েছে- গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ সংগঠিত করার জন্য বিভিন্ন টুলস ও ইন্টারনেট বিধিনিষেধ এবং দালাই লামা সম্পর্কিত অ্যাপসগুলো।
৫. অ্যাপল দাবি করেছে যে চীনা ব্যবহারকারীদের ডেটা নিরাপদ। অথচ অ্যাপল তার গুইয়াং ডেটা সেন্টারের নিয়ন্ত্রণ চীনা সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছে। ওই রাজ্যের সরকারি কর্মকর্তারাই কম্পিউটারগুলো পরিচালনা করে। অথচ ডিজিটাল কীগুলো- যা দ্বারা এই সিস্টেমকে আনলক করে, সেগুলো ওই ডেটা কেন্দ্রেই সংরক্ষণ করা হয়।
প্রবন্ধে বলা হয়, বেসামরিক নাগরিকদের স্বাধীনতা এবং গোপনীয়তা সম্পর্কে টিম কুকের বক্তব্য ও চীনে তার প্রশংসনীয় অনুভূতি ব্যক্ত অপ্রাসঙ্গিক। কেননা, সেখানে অ্যাপলের কাছে তার চীনা গ্রাহকদের ডেটা সরকারের কাছে সরবরাহ করা ছাড়া কোনও বিকল্প নেই। অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও সম্ভবত, অ্যাপল সেখানে নজরদারি ও সরকারি সেন্সরশিপের সহায়ক হয়ে উঠেছে।
যদিও এই জটিলতাগুলোর কাছে এখনও হেরে যায়নি অ্যাপল। বরং সংস্থাটি খুব সতর্কতার সঙ্গে চীন থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। এর অংশ হিসেবে আইফোনের উৎপাদন ভারতে, এয়ারপডস ভিয়েতনামে, ম্যাক মালয়েশিয়া এবং আয়ারল্যান্ডে নিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে সরবরাহ চেন স্থানান্তর করতে শত শত কর্মীর সমন্বয়ে একটি ‘টাইগার টিম’ গঠন করেছে অ্যাপল।
আমাদের ফেসবুক লিঙ্কঃট্রাস্ট নিউজ ২৪