ঠাকুরগাঁওয়ে হারিয়ে যাচ্ছে পিঁড়িতে বা খাটে বসে চুল-দাড়ি কাটার দৃশ্য!
মোঃ মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি, মানুষ স্বভাবগতভাবে সুন্দরের পূজারী। চুল-দাড়ি মানুষের সৌন্দর্য বহন করে। এই চুল-দাড়ি নিয়ে যুগে যুগে মানুষের ভাবনার অন্ত নেই।
এই কারণেই ‘নরসুন্দরদের’ কদর এবং প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। চুল-দাড়ি কেটে মানুষকে সুন্দর করে তোলাই যাদের কাজ, তারাই হলেন ‘নরসুন্দর’। এঁরা আমাদের কাছে নাপিত হিসেবেও পরিচিত। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ফলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এসেছে পরিবর্তন, লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। আধুনিক সভ্যতায় গড়ে উঠেছে উন্নত মানের সেলুন। বেশি কদর থাকায় অনেকে সেই সেলুনগুলোর দিকে ঝুঁকছেন।
এখনো হাট-বাজারে, গ্রামাঞ্চলের পিঁড়িতে বা খাটে বসে চুল-দাড়ি কাটেন ‘নরসুন্দররা’। হাঁটুর নিচে মাথা পেতে চুল-দাড়ি কাটার রীতি আবহমান বাংলার মানুষের মধ্যে প্রচলিত ছিল, কিন্তু সেই পরিচিত দৃশ্য আজ আর সচরাচর চোখে পড়ে না।
হারিয়ে যাচ্ছে এই প্রাচীন গ্রামীণ ঐতিহ্য। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার অনেক হাট-বাজারে এখনো সেই চেনা দৃশ্য চোখে পড়ে। কম খরচের কথা ভেবে এখনো অনেকেই তাঁদের কাছে চুল-দাড়ি কাটান।
উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা খেপাশীল, বংশ পরম্পরায় নরসুন্দর। দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে তিনি এ পেশায় আছেন। উপজেলার বড় খোচাবাড়ি বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে কাজ করেন। তার মৃত্যুর পর বাপ-দাদার এই পেশা ধরে রাখার মতো তার বংশে কেউ নেই।
তিনি জানান, অনেক বছর আগে চুল কাটাতে দিতে হতো তিন টাকা আর দাড়ি কাটাতে দুই টাকা। তখন যে আয় হতো, তা দিয়ে সংসার ভালোভাবে চলত। কিন্তু বর্তমানে বিশ টাকায় চুল এবং দশ টাকায় দাড়ি কাটার পরেও সারা দিন যে আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালাতে তাদের কষ্ট হয়।
হাসান আলী নামে একজন বলেন, এখন তো উপজেলায় অনেক আধুনিক সেলুন আছে। কিন্তু যখনই বাজারে যাই আর চুল কাটার সেই পুরনো দৃশ্য দেখি, তখন ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। চেনা এই দৃশ্য ছোটবেলার স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।
তিনি আরো বলেন, আমরা এখনো এ দৃশ্য নিজের চোখে দেখতে পাই। তবে এমন একটা সময় আসবে, যখন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই দৃশ্য শুধুই গল্প হয়ে থাকবে।