রাজধানীর মহাখালীতে ময়না মিয়া নামে যে ব্যক্তির ছয় টুকরা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁকে তাঁর প্রথম স্ত্রী ফাতেমা খাতুন শিল্পীই হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের ভাষ্য মতে, শিল্পীকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, পারিবারিক কলহের জেরে গত শনিবার রাতে স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে একাই গলা কেটে হত্যা করেন। পরদিন রাতে একাই লাশ ছয় টুকরা করে অটোরিকশা ভাড়া করে বিভিন্ন স্থানে ফেলে আসেন। গতকাল মঙ্গলবার শিল্পীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) হারুন অর রশিদ বলেন, গত সোমবার বনানীর ৪ নম্বর থানা রোডের ১৮ নম্বর বাসার একটি ইলেকট্রনিক কম্পানির অফিস থেকে শিল্পীকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিল্পী জানিয়েছেন, গত ২৩ মে থেকে ময়না মিয়া কড়াইল বস্তিতে শিল্পীর বাসায় ছিলেন। পারিবারিক কলহ, টাকা-পয়সা বণ্টন ও একাধিক বিয়েকে কেন্দ্র করে তাঁদের মধ্যে মনোমালিন্য চরম আকার ধারণ করেছিল। পরে ময়নাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন শিল্পী।
শিল্পীর বরাত দিয়ে ডিবি কর্মকর্তা জানান, গত শুক্রবার রাতে দুই পাতা ঘুমের ওষুধ কিনে বেশ কয়েকটা ট্যাবলেট জুসের সঙ্গে মিশিয়ে ময়না মিয়াকে খাওয়ান শিল্পী। শনিবার সন্ধ্যার দিকে কিছুটা জ্ঞান ফিরে পান ময়না। ঘুম থেকে উঠে আবার স্ত্রীকে গালমন্দ করে আক্রমণ করতে গেলে নিজেই বিছানায় লুটিয়ে পড়েন। ময়না আর্তনাদ করলে শিল্পী ঘুমের ট্যাবলেট মেশানো জুস আবার তাঁর মুখে ঢেলে দেন। এক পর্যায়ে শিল্পী তাঁর ওড়না দিয়ে ময়নার দুই হাত শরীরের সঙ্গে বেঁধে ফেলেন এবং মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেন। এরপর ময়নার বুকের ওপরে বসে চাকু দিয়ে গলা কাটা কাটেন শিল্পী। শনিবার রাত ও পরদিন রবিবার সারা দিন লাশ মেঝেতে পড়ে ছিল।
হারুন অর রশিদ আরো বলেন, রবিবার রাতে ধারালো দা দিয়ে লাশ ছয় টুকরা করেন শিল্পী। একটি লাল রঙের কাপড়ের ব্যাগে মাথা, শরীরের মূল অংশকে একটি রঙের ড্রামে এবং দুই হাত, দুই পা একটি বড় কাপড়ের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখেন। পরে ১৩০০ টাকা দিয়ে একটি অটোরিকশা ভাড়া করে লাশের টুকরা তিন স্থানে ফেলে বাসায় চলে যান শিল্পী। তিনি বাসায় গিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে থাকেন। শিল্পী ভেবেছিলেন, ময়নার লাশ কেউ শনাক্ত করতে পারবে না। কিন্তু উদ্ধার করা লাশের হাত থেকে আঙুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেইসের সঙ্গে মিলিয়ে পুলিশ জানতে পারে নিহতের নাম ময়না মিয়া, বাড়ি কিশোরগঞ্জ।
এরপর মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে শিল্পীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেখানো মতেই ভিকটিমের রক্তমাখা জামা-কাপড়, ধারালো ছুরি ও দা, বিষাক্ত পেয়ালা ও শিল-পাটা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বনানী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত ময়না মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী। এ ঘটনায় আরো কেউ জড়িত আছে কি না খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
ডিবির একটি সূত্র জানায়, মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করে মাসে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করতেন শিল্পী। দুই সন্তানকে নিয়ে কড়াইল বস্তির ওই বাসায় ভাড়া থাকলেও সব সময় চাইতেন স্বামী ময়না মিয়াও তাঁদের সঙ্গে থাকুক। স্বামীকে বশে আনতে নিয়েছিলেন তাবিজও। কিন্তু এত কিছুর পরও ময়না মিয়ার ভালোবাসা পেতেন না। উল্টো ময়না মিয়া আরেক নারীকে বিয়ে করেন।
আমাদের ফেইসবুক Link : ট্রাস্ট নিউজ ২৪