শীর্ষ জঙ্গি নেতা সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক ওরফে জিয়া বর্তমানে দেশেই আছেন। তার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কোনো তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নেই। গত বছরের মার্চ পর্যন্ত গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে দেশে থেকেই যোগাযোগ রাখতেন তিনি।
এরপর থেকে কারো সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। এ তথ্য জানিয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট আরো জানায়, ইতিমধ্যে নব্য জেএমবির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের অধিকাংশই জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে কাজ করেছে। বর্তমানে তাদের কার্যক্রম অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে।
বর্তমানে নব্য জেএমবির নেতৃত্বে কে? কীভাবে চলছে দলটি? এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট বলেছে, দেশে এখন আর তাদের কোনো নেতা নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে তাদের নেটওয়ার্ক তছনছ হয়ে গেছে। বর্তমানে দুই জন বিদেশ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাদের একজন আবুল আব্বাস এবং অপরজন আবু আহমেদ। তারা দুই জনই মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান করছেন। তবে দেশে থাকা জঙ্গিরা তাদের নেতৃত্ব নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত। কে কার নেতৃত্ব মানবে, সেটা নিয়েই এই বিভক্তি।
জানতে চাইলে কাউন্টার টেররিজমের প্রধান ও ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, ‘দেশে এখন জঙ্গিদের বড় বা মাঝারি ধরনের হামলা চালানোর মতো কোনো সক্ষমতা নেই। তারা বিচ্ছিন্নভাবে সদস্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে অনেকেই ধরা পড়ে যাচ্ছে। তারা এখন বিচ্ছিন্ন।’
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেজর জিয়া এখন দেশেই আছেন। গত মার্চ পর্যন্ত কাউন্টার টেররিজম তার দেশে থাকার তথ্য নিশ্চিত করলেও বর্তমানে তার অবস্থান নিশ্চিত নয়। দেশে অবস্থান করলেও তার সব ফোন বন্ধ। তার নেটওয়ার্কের ৫০ জন এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, জিয়া বাংলাদেশেই আছেন। তার দলের সিংহভাগই ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে। এই কারণে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছেন। বিজ্ঞান লেখক অভিজিত্ হত্যার সময় ঘটনাস্থলের ১০০ ফিট দূরেই ছিলেন জিয়া। সেখানে উপস্থিত থেকে পুরো বিষয়টি মনিটরিং করছেন। অভিজিৎ হত্যা মামলার চার্জশিটেও বিষয়টির উল্লেখ ছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে বিদেশে আছে প্রায় ৪০ জনের মতো। যারা এদেশ থেকে গেছে। এদের মধ্যে খিলগাঁওয়ের শিশু হাসপাতালের ডা. রোকন বর্তমানে সিরিয়া আছেন। স্ত্রীসহ পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে তিনি সেখানে যান। পরিবারের সদস্যরা কোথায় আছেন বা আদৌ বেঁচে আছেন কি-না সে তথ্য জানা না গেলেও রোকন সেখানে সামরিক হাসপাতালে কাজ করেন। সেখানে আছেন সিলেটের মান্নানের পরিবারের ১২ সদস্য। তারা মারা গেছে না বেঁচে আছে সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। একইভাবে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া জুনায়েদ খান ও ইব্রাহিম খান নামে দুই ভাইয়ের কোনো খোঁজ নেই। তাহমিদ শাফি স্ত্রী নিয়ে ওখানে গেছেন। তবে ডা. আরাফাত ও সিফাত সেখানে মারা গেছেন। এই বিষয়টি বাংলাদেশের গোয়েন্দারা ইতিমধ্যে নিশ্চিত হয়েছে।
কাউন্টার টেররিজমের উপ-কমিশনার সাইফুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, ‘অভিজিৎ হত্যার পর আমরা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু করি। গ্রেফতারকৃত জঙ্গিরা জিয়ার ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেয়। তাতে আমরা মোটামুটি নিশ্চিত যে জিয়া দেশেই আছে।’
আমাদের ফেইসবুক Link : ট্রাস্ট নিউজ ২৪