ঠাকুরগাঁওয়ে পাউবো কর্মকর্তার কোটি টাকার কাঠ বাণিজ্য, বিপাকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা!
মোঃ মজিবর রহমান শেখ
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি,
ঠাকুরগাঁওয়ের পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এস এম রিয়াজুল হক। দুই হাজার উনিশ সাল থেকে এ পদে কর্মরত রয়েছেন তিনি। সরকারি কর্মকর্তা হয়েও গোপনে গাছ কেনা, কনস্ট্রাকশন ভবনে কাঠ সরবরাহ, বিক্রি এবং মজুদ করেছেন। পৌরশহরের কয়েকটি স’ মিলে সরেজমিনে দেখা যায়, ফাড়াবাড়ি অটোস্ট্যান্ড মোড়ে সাইফুলের মিলে কাঁঠাল গাছের গুড়ি, সেনুয়া ব্রিজের পাশে বাবুর মিলে কাঁঠাল এবং মেহগনী গাছের গুড়ি, মৌসুমির মিল, ফারুকের মিলসহ প্রায় সব ক’টি মিলে তার কোটি টাকার কাঠের গুড়ি রয়েছে। স’ মিলগুলো থেকে কাঠের বিভিন্ন আকৃতি করে সেগুলো মজুদ করেন দুটি গোডাউনে। সরকারি কর্মকর্তার এই ধরনের কাঠ বাণিজ্যে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী এবং স’ মিলের মালিকরা। চড়া দামে কাঠ কিনে মজুদ করায়, বাজার ধরে রাখতে পারছেন না তারা। কর্মকর্তার এই গোপন ব্যবসা এবং কোটি টাকার আয় নিয়ে নানান প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
পৌরশহরের নিশ্চিন্তপুর এবং তেলী পাড়ায় কাঠ মজুদ করার জন্য দু’টি গোডাউন রয়েছে তার। বিভিন্ন স’ মিল থেকে প্রস্তুত করা কাঠ মজুদ করে রাখা হয় গোডাউনে। দিনের বেলা সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে, ব্যবসার গোপন তথ্য ফাঁস হওয়া থেকে বাঁচতে গভীর রাতে গোডাউন থেকে ট্রাকে করে কাঠ অন্যত্র পাঠান তিনি। তাতেও নিস্তার পাননি এই সরকারি কর্মকর্তা। রাতের বেলা কাঠ সরানোর সময় গণমাধ্যমের সামনে ধরা পড়েন তিনি। সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা, উনিশ শ উনআশি এর ১৭ নম্বর ধারায় বলা আছে, কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের অনুমোদন ছাড়া অন্য কোনো ব্যবসায় জড়িত হতে পারবেন না। অন্য কোনো চাকরি বা কাজও গ্রহণ করতে পারবেন না।
স্থানীয় স’ মিলের মালিক মোহাম্মদ বাবু বলেন, শহরের প্রত্যেকটা মিলে তার কয়েক কোটি টাকার কাঠ কেনা রয়েছে। আমরা যদি পঞ্চাশ টাকা দাম বলি, তিনি সত্তর টাকা দিয়ে সব কাঠ কিনে গোডাউনে রেখে দেন। এজন্য আমরা ব্যবসা করতে পারছি না। তিনি এত টাকা কোথা থেকে পান? আর চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা কিভাবে করেন?
কাঠ ব্যবসায়ী আরিফ হাসান বলেন, আমাদের কয়েক মাস ধরে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। তিনি সবকিছু বেশি দামে কিনে নেন এবং আবার গোডাউনে মজুদ করে রাখেন। ঠাকুরগাঁও জেলা সহ বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করেন। তার টাকার কাছে আমাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চাকরির পাশাপাশি একই কর্মস্থলে ব্যবসার বিষয়ে জানতে চাইলে এস এম রিয়াজুল হক বলেন, আমি কয়েক দফায় চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ লাখ টাকার কাঠ কিনেছি। রংপুরে দু’টি ভবনের কনস্ট্রাকশনের জন্য কিনে দু’টি গোডাউনে রেখেছি। তবে এটি আমার ব্যবসা নয়। আর সব স’ মিলে আমার কাঠ কেনা রয়েছে। সবার প্রাপ্য আদায়ের জন্য আমি এটি করেছি। গভীর রাতে গোডাউন থেকে কাঠ সরানোর বিষয়ে তিনি বলেন, দিনের বেলা আপনারা এসেছেন, ভাবলাম ঝামেলা হবে, তাই রংপুর পাঠিয়ে দিচ্ছি।
ঠাকুরগাঁও জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল চন্দ্র সরকার বলেন, বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবসা করার সুযোগ নেই। এটি প্রমাণিত হলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।