ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সাবেক দুই এমপির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা।
মোঃ মজিবর রহমান শেখ
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি।
ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো: দবিরুল ইসলাম এবং তার ছেলে সাবেক এমপি মাজহারুল ইসলাম সুজনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ২৫ সেপ্টেম্বর, বুধবার, বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত, বালিয়াডাঙ্গী, ঠাকুরগাঁওয়ে মামলাটি দায়ের করেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ক্ষুদ্রমাছখুড়িয়া গ্রামের মৃত খতিব উদ্দিনের ছেলে মো: আব্দুল জব্বার, যিনি পঁচাশি বছর বয়সী।
সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত, বালিয়াডাঙ্গী, ঠাকুরগাঁওয়ের বিজ্ঞ বিচারক রহিমা খাতুন মামলাটি গ্রহণ করে ঐ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো অপমৃত্যু মামলা বা জি,আর মামলা হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে রিপোর্ট দাখিলের জন্য বালিয়াডাঙ্গী থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেন। নালিশকারীকে অতিসত্বর প্রসেস দাখিলের নির্দেশ দিয়ে আগামী ১৭ অক্টোবর তারিখে তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে আদেশের দিন ধার্য করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, দুই হাজার ষোল সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার এক নম্বর পাড়িয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য পদে মামলার এক নম্বর আসামী শাহ আলম তৎকালীন আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী হিসেবে (টিউবওয়েল) প্রতীকে অংশ নেন। তার সাথে একই পদে স্থানীয় গিয়াস উদ্দিন (তালা) এবং সামশুল হক (মোরগ) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করেন।
দুই হাজার ষোল সালের সাতই মে, ঘটনার দিন, স্থানীয় সাত নম্বর ভোট কেন্দ্র কালডাংগা দাখিল মাদ্রাসায় সকাল আটটা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলতে থাকে। কিন্তু দুপুর একটার দিকে মামলার এক নম্বর আসামী শাহ আলম তার পরাজয়ের আশংকা থেকে ভোটকেন্দ্রে গণ্ডগোল শুরু করেন। এ সময় আসামীরা প্রায় একশ থেকে দেড়শো সন্ত্রাসী ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্র থেকে মারপিট করে বের করে দেন। পরক্ষণেই আসামীগণ প্রার্থীদের পুলিং এজেন্টদের বাইরে বের করে দিয়ে চূড়ান্ত ফলাফলের কাগজ অর্থাৎ রেজাল্ট শীটে পছন্দমত ভোট বসিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে তাদেরও বের করে দেওয়া হয়। এ সময় স্থানীয় মানুষজন ঘটনার বিষয়ে জানার জন্য এগিয়ে গেলে পৌনে দুইটায় চার/পাঁচ নম্বর আসামীর হুকুমে অন্যান্য আসামীগণ দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র দ্বারা মাদ্রাসা মাঠের সাধারণ ভোটারদের ওপর আক্রমণ করে। এ সময় অনেকেই গুরুতর আহত হন। একপর্যায়ে চার/পাঁচ নম্বর আসামীর হুকুমে (এক, দুই, ছয়, সাত, ও সতেরো) নম্বর আসামীগণ কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের রাইফেল কেড়ে নিয়ে নিরীহ জনসাধারণের ওপর গুলি চালানো শুরু করে। এ সময় মামলার বাদীর ছেলে মো: মাহাবুব আলম পল্টু ঘটনাস্থলেই মারা যান। পুলিশ তার লাশ প্রথমে বালিয়াডাঙ্গী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করে, পরের দিন ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। হাসপাতাল থেকে লাশকে মর্গে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত ও ময়নাতদন্ত করে তৎকালীন বালিয়াডাঙ্গী থানা পুলিশ গ্রামের বাড়িতে উপস্থিত থেকে মরদেহ দাফন করায়। পরবর্তীতে এ বিষয়ে কোনো মামলা নেয়নি পুলিশ। এ ঘটনায় আসামীরা হলেন—ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো: দবিরুল ইসলাম, ছেলে সাবেক এমপি মাজহারুল ইসলাম সুজন, মোমিনুল ইসলাম ওরফে সুমন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো: শফিকুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আসলাম জুয়েলসহ ষোলো জনের নাম উল্লেখ করে একশ থেকে দেড়শ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে।