বিজেপির অনেক আশা ছিল পশ্চিমবঙ্গে এবার ক্ষমতায় আসবে। শুধু বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতারা ভেবেছিল মুসলিম ও বাংলাদেশ বিদ্বেষ ছড়িয়ে হিন্দু ভোটারদের মন জয় করতে পারবে। এজন্য বিজেপি সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে পশ্চিমবঙ্গে।
নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহর ঘন ঘন সফরই স্পষ্ট করেছে এবার পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া। কিন্তু তাদের সেই আশা পূরণ হলো না। অনেক হিসেব নিকেশ, অনেক পরিকল্পনা করা সত্বেও কাঙ্ক্ষিত ফলের কাছাকাছিও যেতে পারেনি গেরুয়া শিবির। যেখানে তারা বারবার গলা ফাটিয়েছে এবার দুই শতাধিক আসনে জিতবে।
এজন্য অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীসহ এক ঝাঁক তারকাদের নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যাপকভাবে মাঠে নামিয়েছে। ওই তারকারা একদিকে বিজেপি আসলে কী কী সুবিধা হবে তা মানুষের কাছ প্রচার করেছে, অন্যদিকে তৃণমূলকে নানাভাবে কটাক্ষ করেছে। যাইহোক, এসব কিছু করেও নির্বাচনে জিততে পারেনি তারা।
বিজেপি বলয়ের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, নির্বাচনে হারের কারণ নিয়ে দলের অন্দরে বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। আর তাতে প্রাথমিকভাবে ৫টি কারণ দেখছেন রাজ্য নেতারা।
১. মুখের অভাব। রাজ্য বিজেপি নেতারা প্রচার পর্বে অনেক পরিশ্রম করলেও কোনও মুখ তুলে ধরতে পারেননি। এই সিদ্ধান্ত ছিল বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরই। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা বারবার বাংলার ‘ভূমিপুত্র’-ই মুখ্যমন্ত্রী হবেন বলে জানালেও আলাদা করে কারও নাম বলেননি। অন্য দিকে, তৃণমূলের মুখ ছিলেন ১০ বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকা লড়াকু নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বাংলার মেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২. বাংলার কোনও নেতাকে মুখ হিসেবে তুলে না ধরার জন্য নীলবাড়ির লড়াইয়ে বড় বেশি নির্ভরতা ছিল কেন্দ্রীয় নেতদের উপরে। আর সেই নির্ভরতাকে ‘বহিরাগত’ তকমা দিয়ে আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল। বিজেপি প্রাথমিক ভাবে মনে করছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূলের এই আক্রমণকেই সমর্থন দিয়েছে বাংলার মানুষ।
৩. রাজ্য বিজেপি আরও একটি কারণকে গুরুত্ব দিচ্ছে। দলের বক্তব্য, ২০১৬ সালে বিজেপি রাজ্যে মাত্র ৩টি আসনে জিতেছিল। সেখান থেকে একেবারে ক্ষমতায় আসার যে লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল তা দলের অভিজ্ঞতার তুলনায় অনেকটাই বেশি। লোকসভা নির্বাচনের ফলকে বিধানসভা ভোটের ক্ষেত্রেও প্রাধান্য দেওয়া ঠিক হয়নি। তাই এই হারকে বড় মনে হচ্ছে।
৪. মেরুকরণকে হাতিয়ার করে নীলবাড়ির লড়াইয়ে ফায়দা তুলতে চেয়েছিল বিজেপি। প্রচার পর্বে অনেক ক্ষেত্রেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোষণের অভিযোগ তুলতে কড়া ভাষা প্রয়োগ করেছেন নেতারা। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছে এর ফলে মুসলিম ভোট এককাট্টা হলেও হিন্দু ভোটের সিংহ ভাগ ঝুলিতে টানা যায়নি।
৫. বিজেপিতে ‘আদি ও নব্য’ বিবাদ অনেক দিনের। গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই এই অভিযোগ নিয়ে দলের মধ্যে অনেক গোলযোগ হয়েছে। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে তৃণমূল থেকে যারা এসেছেন তাদের প্রাধান্য দেওয়া দলের কর্মী, সমর্থক এবং ভোটটাররা ভাল চোখে নেয়নি বলেই মনে করছে বিজেপি। একই সঙ্গে রাজ্য নেতাদের বক্তব্য, রাজ্যের সর্বত্রই প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে অনেক ভুল ছিল।
আমাদের ফেইসবুক Link : ট্রাস্ট নিউজ ২৪