কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ায় মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিরুদ্ধে গ্রাহকরা গত ১১ মাসে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির কাছে সাড়ে ৫ লাখ অভিযোগ জমা দিয়েছে। এবিষয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, এত বেশি অভিযোগ থেকে বোঝাই যাচ্ছে গ্রাহকরা সেবা পাচ্ছেন না। গ্রাহকের সমস্যার সমাধান এবং সঠিক সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের কাজ। সেই কাজটি আমরা সঠিকভাবে করতে চাই। ইতিমধ্যে কিছু উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, প্রত্যেক গ্রাহকের সেবা নিশ্চিত করা হবে। টাওয়ার কম্পানিগুলো নিয়ে কিছু জটিলতার কারণে এতদিন নেটওয়ার্কে কিছু সমস্যা হয়েছে। জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু হয়েছে। এ মাসেই ৫০০ টাওয়ার বানানো হবে। পাশাপাশি তাদের সঙ্গে স্পেকট্রাম কেনার বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে। শিগগিরই তারা আরো কিছু স্পেকট্রাম কিনবে।
বাংলাদেশে যেখানে প্রায় ২০ লাখ মানুষকে এক মেগাহার্ডজ স্পেকট্রাম দিয়ে সেবা দেয়া হয়, সেখানে উন্নত দেশগুলোতে এক লাখ মানুষের জন্য এক মেগাহার্ডজ স্পেকট্রাম বরাদ্দ রাখা হয়। ফলে কিছু জটিলতা ছিল। সেই জটিলতাগুলোর সুরাহা হয়ে যাচ্ছে। এখন থেকে সেবার মান আরো উন্নত হবে, পাশাপাশি মানুষের অভিযোগও কমে যাবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়ের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
বিটিআরসির তথ্য, মোবাইল ফোন গ্রাহকদের বছরের শুরুতে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল। করোনা মহামারির মধ্যে অভিযোগ কিছুটা কমলেও বছরের শেষ দিকে এসে অভিযোগ বেড়ে যায়। গত জানুয়ারিতে অভিযোগ করেন ৮০ হাজারেও বেশি। করোনা শুরুর পর এপ্রিল মাসে অভিযোগ কমে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৩১৬টি। মে, জুন ও জুলাই মাসে অভিযোগ কম ছিল। ওই তিন মাসে অভিযোগ করা হয় ২৫ হাজারের কম। আবার আগস্ট থেকে অভিযোগ বাড়তে থাকে। আগস্টে ৫৪ হাজার অভিযোগ এলেও সেপ্টেম্বরে অভিযোগ আসে ৭৫ হাজারের মতো। অক্টোবর ও নভেম্বরে অভিযোগ আসে ৭০ হাজার ও ৬৩ হাজারের মতো। এদিকে অভিযোগ আসলেও সে সব অভিযোগের সুরাহা হয় না। অভিযোগ পাওয়ার পর বিটিআরসি সংশ্লিষ্ট অপারেটরকে তা জানিয়ে দিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলে দায় সারে।
মত বিনিময়ের সময় বিটিআরসি চেয়ারম্যান আরো বলেন, আগামী ১ জুলাই থেকে দেশে অবৈধ ও নকল হ্যান্ডসেট বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হবে। ওই সময়ের আগে গ্রাহকদের হাতে থাকা সচল হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। অবৈধ মোবাইল সেট বন্ধ ও বৈধ সেটের নিবন্ধনে ডিসেম্বরে বিটিআরসির সঙ্গে চুক্তি করে দেশীয় প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটি। চুক্তি অনুযায়ী ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) সিস্টেম চালু করতে হবে সিনেসিসকে।
বিটিআরসি প্রধান বলেন, যে সেটগুলো গ্রাহকের হাতে আছে তাদেরকে ডিসটার্ব না করে কাজটি করতে চাই। যে সেটগুলো চালু আছে তাদের ইনকর্পোরেট করে নেবো, সে সুযোগ দেবো। নতুন যেগুলো আসবে সেগুলো অবশ্যই নিবন্ধন হয়ে আসতে হবে। আমরা সেই প্রক্রিয়ায় যাব, আমরা গ্রাহকদের কোনো সমস্যায় ফেলতে চাই না। আগামী ১ জুলাই থেকে অবৈধ সেটগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে।
এসময় বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদুল আলম বলেন, আমাদের কার্যক্রম চলমান আছে। সেট বৈধ কিনা তা এখন যাচাই করা যাচ্ছে। আগামী ১৬ জানুয়ারি প্রতিটি অপারেটর ম্যানুয়ালি আমাদের জানাবে নতুন কোনো সেট তাদের নেটওয়ার্কে আছে। এগুলো ম্যানুয়ালি অননেট চেক করে পরবর্তী সাতদিনের মধ্যে জানাবে সেটটি বৈধ না অবৈধ। বাকিগুলো যেটা অপারেশন করে বন্ধ করা হবে সেটি ১ জুলাই থেকে অনলাইন করা হবে।
বিটিআরসি’র পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, এই প্রক্রিয়া শুরু হলে অবৈধ হ্যান্ডসেটে প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট একটি সিম ছাড়া অন্য কোনো সিম কাজ করবে না। নির্দিষ্ট সময় পরে কোনো সিমই কাজ করবে না। ফলে গ্রাহকরা বাধ্য হয়েই নকল বা অবৈধ হ্যান্ডসেট ব্যবহার বন্ধ করবেন।
এদিকে বিদ্যমান আইনে স্পেকট্রাম ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা বিটিআরসির। সেই আইন সংশোধনের আগেই এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর বা ‘ডট’কে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে সম্প্রতি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এটি করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বিটিআরসির দায়িত্ব ও এখতিয়ারের আরো বেশ কিছু বিষয় ওই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ তাদের অধীন ওই প্রতিষ্ঠানকে অর্পণ করেছে। সর্বোপরি আইন সংশোধন করে স্বাধীন এই কমিশনের স্বাধীনতাই কেড়ে নেয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আমাদের ফেইসবুক Link : ট্রাস্ট নিউজ ২৪