মোঃ মজিবর রহমান শেখ
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার বলিদ্বারা শিয়ালডাঙ্গী গ্রামের সাফ চ্যাম্পিয়ন নারী ফুটবলারের বাড়ি। পুরনো মাটির ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে একটি ছোট ফুটো, যা আবার খড়ের বেড়া দিয়ে আটকানো। এলোমেলো এই ঘরে থাকা একটি মাঝারি সাইজের টিনের বাক্স থেকে বের করা হচ্ছে ট্রফি, সম্মাননা স্মারক, মেডেলসহ একজন চ্যাম্পিয়ন নারী ফুটবল খেলোয়াড়ের সব অর্জন। এগুলো একে একে বের করে টেবিলে সাজানো হচ্ছে ফটোসেশনের জন্য। এটি সাফ চ্যাম্পিয়ন জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় স্বপ্না রানীর বাড়ি। নিজের মেধা ও শ্রম উজাড় করে মাঠে খেলে দেশের সুনাম অর্জন করলেও, ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা এই নারী ফুটবলারের ভাগ্য বদলাতে পারেনি। ভালো একটি ঘরে তার এসব অর্জন পরিপাটি করে সাজানোর জন্য এমন জায়গাও নেই। একপ্রকার বাক্সবন্দি হয়ে থাকে চ্যাম্পিয়ন এই খেলোয়াড়ের যাবতীয় অর্জন।
ফুটবলার স্বপ্না রানীর বাবা, নিরেন বাবু বলেন, “আমার মেয়ে যখন ফুটবল খেলা শুরু করে, তখন গ্রামে অনেকে তার বিরুদ্ধে কথা বলেছিল। টিটকারি করেছে। শুধু মেয়েকে নয়, আমাকেও বলেছিল, আমার মেয়েকে নাকি ভাঙা টিভিতে দেখা যাবে। এসব কিছু না শোনেই আমি মেয়েকে উৎসাহ দিয়েছি। এখন গ্রামবাসী আমার মেয়ের সফলতায় খুশি। মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন হলে, আমিও চ্যাম্পিয়ন। আজ সারাদেশ আমাদের মেয়েদের নিয়ে গর্বিত। তবে এত অর্জন সত্ত্বেও তিনি শঙ্কিত। তিনি বলেন, ‘দেশের ফুটবল এখনও অনুন্নত। তাই মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে আমি চিন্তিত। মানুষ মনে করে এখন আমাদের অনেক টাকা, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মেয়ের অর্জনগুলো সাজিয়ে রাখার মতো একটি আসবাবপত্রও নেই। তারা দেশের জন্য খেলে। তাই সরকারের উচিত তাদের সহযোগিতা করা, যেন তারা মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে। যারা দেশের জন্য খেলে, সরকারের উচিত তাদের একটি নিশ্চিত ভবিষ্যৎ তৈরি করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া।'”
মা সাবিলা রানী জানান, “ডিসের লাইন না থাকায়, আমি মেয়ের খেলা দেখতে পারিনি। তবে, ছেলে এসে বললো, ‘মেয়েরা আবারও সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে’, আমি খুব আনন্দিত হয়েছি। খবরটা মুহূর্তেই গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।” তিনি আরও বলেন, “যদি এমন জয়গাথা বজায় থাকে, একদিন দেশের ফুটবলের অনেক নাম-ডাক হবে। তখন নিশ্চয়ই স্বপ্নার মতো খেলোয়াড়দের কদর বাড়বে।”
স্থানীয় রাঙাটুঙ্গী প্রমিলা নারী ফুটবল একাডেমি থেকে উঠে আসা বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় স্বপ্না রানী। একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা মো. তাজুল ইসলাম বলেন, “নারী ফুটবলাররা যে অর্জন এনে দিচ্ছে, তাতে আমরা গর্বিত। তবে তাদের স্থায়ী জীবিকার ব্যবস্থা করা উচিত, যাতে খেলার পরে তারা নিশ্চিন্ত জীবনযাপন করতে পারে। আমরা চাই, স্বপ্না রানীর মতো খেলোয়াড়দের অর্জনগুলো যেন অনাদরে না পড়ে।”
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা বলেন, “নারী খেলোয়াড়দের মধ্যে যারা আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, তাদের সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”