বিএনপির ডাকা চতুর্থ দফার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের শেষ দিনেও অন্তত ৮ টি যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকাতেই ৩ টি বাস ও ১ টি কাভার্ড ভ্যানে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দিনাজপুর, ফরিদপুর ও রাজশাহীতে চারটি যানবাহনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
পুড়িয়ে দেওয়া আটটি যানবাহনের মধ্যে বাস ৪টি। এর মধ্যে ১টি বাসে যাত্রীবেশে উঠে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে আগুন দেওয়ার পাশাপাশি ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের গোলাঘাট এলাকায় একটি রেলসেতুর চারটি স্লিপারে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে আগুন দেওয়ার এসব ঘটনা জানা গেছে।
অবরোধের পক্ষে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকাল সোমবারও ঝটিকা মিছিল করেছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। এ ছাড়া বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন দল এবং জোটের পক্ষ থেকেও মিছিল–সমাবেশ হয়েছে।
স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কম হলেও গতকালের অবরোধেও ঢাকায় গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলেছে। দুপুরের পর ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে দূরপাল্লার বাসও চলেছে। ট্রেন ও লঞ্চ চলাচলও স্বাভাবিক ছিল। তবে যাত্রী ছিল কম। বরাবরের মতো গতকালও দেশজুড়ে বিভিন্ন সড়কে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির টহল ছিল। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় মিছিল–সমাবেশ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে দলটির নেতা-কর্মীদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
যানবাহনে আগুন : অবরোধের মধ্যে গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে রাজধানীর শনির আখড়া চৌরাস্তায় মৌমিতা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এর আগে সকালে রাজধানীর আবদুল্লাহপুরে দুই যুবক যাত্রীবেশে একটি বাসে উঠে আগুন দেয় বলে জানায় র্যাব। আগুন দিয়ে বাস থেকে নেমে যাওয়ার সময় তাঁদের একজনকে হাতেনাতে আটক করে র্যাবের টহল দল। পরে র্যাব জানায়, আটক যুবকের নাম মামুন মজুমদার। তিনি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক।
অন্যদিকে মামুনকে পেট্রল দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নাছির উদ্দীন। গতকাল রাতে মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পেট্রল, দিয়াশলাই, ককটেলসহ আটক এগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সাজানো নাটক।
আবদুল্লাহপুরে বাসে আগুনের ওই ঘটনা ছাড়াও গত রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সায়েদাবাদের জনপদ মোড়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে এবং মুগদায় একটি কাভার্ড ভ্যানে আগুন দেওয়া হয়।
অবরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও রাজধানীতে একের পর এক যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। সব মিলিয়ে গত ২৮ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে ৭৮টি যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটল।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন–অর–রশীদ গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিচ্ছিন্নভাবে বাসে আগুন দিচ্ছে অবরোধকারীরা। এভাবে বাসে আগুন দিয়ে অবরোধ সফল করা যাবে না। তিনি বলেন, যারা বাসে আগুন দিচ্ছে, তাদের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন ধরনের পরিবহনেও আগুন দেওয়া হয়েছে। গত রোববার গভীর রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ঢাকার বাইরে অন্তত চারটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার তথ্য জানা গেছে। গতকাল সকালে নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কের ডাকমারা এলাকায় পেট্রলবোমা ছুড়ে একটি নছিমন গাড়িতে আগুন দেওয়া হয় বলে পুলিশ জানায়।
বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে ফরিদপুরেও। রোববার গভীর রাতে ফরিদপুর শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড টার্মিনালে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এর আগে গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ফরিদপুর শহরের ধলার মোড় এলাকায় সড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা একটি ট্রাকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
এ ছাড়া দিনাজপুর শহরের আনন্দসাগর নেমতাড়া এলাকায় ভুট্টাবোঝাই ট্রাকে আগুন দেওয়া হয়। পুড়ে যাওয়া ট্রাকের মালিক গুলজার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গাড়ির কাগজপত্রসহ ইঞ্জিন পুড়ে গেছে। ট্রাকে থাকা ভুট্টা নষ্ট হয়ে গেছে। সাত-আট লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ট্রাকটাই জীবিকার একমাত্র সম্বল ছিল জানিয়ে গুলজার বলেন, ‘ট্রাকের আয় দিয়ে ছয়জনের সংসার চলত আমার। ট্রাকের ঋণের কিস্তি এখনো শোধ হয়নি। নাশকতাকারীরা সব শেষ করি দিছে। আমার কারও সঙ্গে কোনো শত্রুতা নেই। কোনো দলও করি না। অথচ নাশকতাকারীরা আমার গাড়িটিই পুড়িয়ে দিল। একটা আতঙ্ক তৈরি করার জন্য আগুনটা লাগানো হইছে।’
সব মিলিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে গত ২৮ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ১০৪টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলার প্রথম আলোর প্রতিনিধি, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।