জ্বালানি সংকট এড়াতে কয়লা উত্তোলন বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত সরকার। একইসঙ্গে কয়লা আমদানি বাড়াতেও উৎসাহিত করা হচ্ছে। ফলে এশিয়ার বাজারে তাপীয় কয়লার বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠছে। ভারতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যই বেশির ভাগ কয়লা আমদানি করে, তারা বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ কয়লা আমদানিকারক। চলতি অর্থবছর আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ কোটি ২০ লাখ টনে। এর মধ্যে ৬৬ শতাংশ ব্যবহার হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। খবর রয়টার্স এর।
ভারতের ঊর্ধ্বমুখী আমদানির কারণে ঊর্ধ্বমুখী চাপ তৈরি হচ্ছে এশিয়ার বাজারে। পণ্যের দাম পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষক সংস্থা আরগাসের হিসাব অনুযায়ী, ২৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়া সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়ান ৪ হাজার ২০০ কিলোক্যালরি (প্রতি কেজিতে) তাপমানসমৃদ্ধ নিম্ন গ্রেডের কয়লার বাজারদর বেড়ে টনপ্রতি ৭৩ ডলার ৪২ সেন্টে উন্নীত হয়েছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় পণ্যটির দাম ৭ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। ওই সময় প্রতি টনের মূল্য ছিল ৬৮ ডলার ১৮ সেন্ট, যা ১৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এ গ্রেডের কয়লা মূলত চীন ও ভারত ক্রয় করে। চীন এসব কয়লা স্থানীয় বাজারে সরবরাহের পাশাপাশি কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে। অন্যদিকে ভারত ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার উচ্চ গ্রেডের কয়লার তুলনায় সাশ্রয়ী হওয়ায় দেশটি ইন্দোনেশিয়া থেকেই স্বল্প দামে জ্বালানিটি আমদানিতে জোর দিচ্ছে। এদিকে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় নতুন মোড় নিয়েছে বাণিজ্যপ্রবাহ।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া এশিয়ার বাজারে কয়লা রফতানি বাড়িয়েছে। এক্ষেত্রে দেয়া হচ্ছে ব্যাপক মূল্যছাড়, যার সুযোগ নিচ্ছে ভারত ও চীন। এমনকি সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ভারতের ক্রেতারা ইন্দোনেশিয়ান নিম্ন গ্রেডের কয়লার পরিবর্তে রাশিয়া থেকে কম দামে জ্বালানিটি আমদানি করতে পছন্দ করছে।
ভারতে এরই মধ্যে গ্রীষ্মকালীন কয়লার চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। এ সময় সম্ভাব্য বিদ্যুৎ ঘাটতি এড়াতে দেশটির ইউটিলিটিগুলো কয়লা আমদানি আরো বাড়াতে পারে। সেক্ষেত্রে আবারো ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠতে পারে। গত সপ্তাহে ভারত সরকার দেশটির কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে জ্বালানিটির উত্তোলন সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। উদ্দেশ্য গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলা করা।
আমদানি বৃদ্ধির প্রয়াস ছাড়াও ভারতের কয়লার সরবরাহ বাড়ছে। পণ্যবাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কেপলার জানায়, ফেব্রুয়ারিতে ভারতের সম্ভাব্য তাপীয় কয়লা আমদানি দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১ লাখ ৯০ হাজার টনে, যা জানুয়ারিতে ছিল ৯৭ লাখ ১০ হাজার টন। ফেব্রুয়ারিতে ইন্দোনেশিয়া থেকেই এসেছে ৬০ লাখ ৯০ হাজার টন কয়লা, যা জানুয়ারিতে ছিল ৪৩ লাখ ৬০ হাজার টন।
অস্ট্রেলিয়া থেকেও দেশটির আমদানি বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে দেশটি থেকে ৫ হাজার ৫০০ কিলোক্যালরি তাপমানের কয়লা কেনা হচ্ছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় এ গ্রেডের দামও ছিল নিম্নমুখী। কিন্তু ২৫ ফেব্রুয়ারি তা বেড়ে টনপ্রতি ১১৮ ডলার ৫৫ সেন্টে উঠেছে। এ গ্রেডের কয়লা একসময় চীনে জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক দ্বন্দ্বের কারণে ২০২০ সালের মাঝামাঝি দেশটি থেকে চীনের কয়লা আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। যদিও গত মাসে দুই দেশের মধ্যে আবারো কয়লা বাণিজ্য শুরু হয়েছে।