ইসরায়েলের জ্বালানিমন্ত্রী ইসরায়েল কাত্জ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া হলে কোনো ধরনের মানবিক সুযোগ দেওয়া হবে না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) কাত্জ বলেন, ‘কোনো বৈদ্যুতিক সুইচে টিপ পড়বে না। কোনো পানির হাইড্র্যান্ট খোলা হবে না।
ইসরায়েল সরকার বুধবার জাতীয় সরকার ও যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করেছে। বিরোধী দলের নেতাকে দেওয়া হয়েছে এই মন্ত্রিসভার বড় দায়িত্ব। হামাসের সঙ্গে সংঘাতকে কেন্দ্র করে অভূতপূর্ব জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে দেশটিতে।
মানবিক সংকট চরমে
ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় গাজায় শত শত ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে যাওয়ায় এবং প্রাণের ভয়ে বাড়ি ছেড়েছে তিন লাখ ৩৮ হাজারের বেশি মানুষ। সাড়ে ছয় লাখের বেশি বাসিন্দা মারাত্মক পানিসংকটের কবলে পড়েছে। জনপদগুলোর পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। বর্জ্য পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডাব্লিউর ৯২টি আশ্রয়শিবিরে দুই লাখ ১৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। আরো অনেকের ঠাঁই হয়েছে সরকারি স্কুল ও অন্যান্য ভবনে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, হাজার হাজার বাড়ি ধ্বংস হওয়া ছাড়াও ৫৬০টি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আরো অন্তত ১২ হাজার ৬০০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরায়েলি বিমানের বোমা ও কামানের গোলা আর রকেট হামলা থেকে রক্ষা পেতে গাজার বিভিন্ন হাসপাতাল ও শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নিয়েছে বহু মানুষ। তবে হাসপাতাল লক্ষ্য করেও হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে।
গাজার সবচেয়ে বড় চিকিৎসাকেন্দ্র সিফা হাসপাতালের চিকিৎসক তালাল তালহা দাবি করেন, আহত ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করতে যাওয়ার সময় তিনি এবং তাঁর তিন সহকর্মী ইসরায়েলি বিমান হামলার শিকার হয়েছেন। তিনি প্রাণে বাঁচলেও তিন সহকর্মী নিহত হয়েছেন।
স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধসে পড়েছে
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অঞ্চলটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধসে পড়েছে। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে কোনো শয্যা খালি নেই। অস্ত্রোপচার কক্ষে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী হাসপাতালে রয়েছে। আহতদের হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত ১৫টি অ্যাম্বুল্যান্স ও ৯টি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছে।
চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ডক্টরস উইদাউট বর্ডার জানিয়েছে, গত শনিবার থেকে গতকাল পর্যন্ত ১৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন। ১৮টি অ্যাম্বুল্যান্স ও আটটি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র আংশিক অথবা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সংগঠনটির শোহাইব সাফি বলেন, ‘অ্যাম্বুল্যান্স হামলাস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করলে তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। ইসরায়েল বার্তা দিতে চায়—আহত বা আটকে পড়াদের উদ্ধার করা যাবে না।’
ইসরায়েলকে সমর্থনের আশ্বাস যুক্তরাষ্ট্রের
সংঘাতের মধ্যে গতকাল ইসরায়েল সফর করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। দীর্ঘদিনের মিত্র ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলকে আরো সামরিক সহায়তা দেওয়া হবে।’
ইসরায়েলের শত্রুদের সতর্ক করে ব্লিনকেন বলেন, ‘দেশটিতে হামলার চিন্তাও করবেন না, কারণ ইসরায়েলের সঙ্গে আছে যুক্তরাষ্ট্র।’ তবে দৃশ্যত কিছুটা ভারসাম্যের চেষ্টায় হামাসের ওপর হামলা চালানোর সময় বেসামরিক প্রাণহানি এড়ানো গুরুত্বপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেন ব্লিনকেন।
ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ‘হামাস হচ্ছে আইএস। আইএসকে যেভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, হামাসকেও সেভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।’
আজ শুক্রবার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের ইসরায়েল সফরের কথা রয়েছে।
বিন সালমানের সঙ্গে রাইসির ফোনালাপ :
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাত নিয়ে আলোচনা করেছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। গত বুধবার এই দুই নেতা টেলিফোনে আলাপ করেন।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এসপিএ জানিয়েছে, তাঁরা গাজার সামরিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। মোহাম্মদ বিন সালমান রাইসিকে বলেছেন, যুদ্ধ থামাতে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে রিয়াদ। এ ছাড়া ফিলিস্তিনকে সমর্থন অব্যাহত রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।