নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সোমবার সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন শুরু করেছেন। গত চার বছরে বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনিক ভবনে কর্মকর্তা-কর্মচারিকে জিম্মি করে বহু আন্দোলন করেছেন হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। এমন ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া সহ সার্বিক নিরাপত্তা ও কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরাতে এমন কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন বলে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন। কর্মবিরতির বিষয়ে জানতে চাইলে হাবিপ্রবির উপাচার্যের পিএস শামসুজ্জোহা বাদশা বলেন, “আমরা অনেক দিন থেকেই একটি বিষয় লক্ষ্য করছি শিক্ষার্থীরা নিজেদের দাবি আদায়ে প্রশাসনিক ভবনে কর্মরত ব্যক্তিবর্গকে জিম্মি করেন।
বর্তমান সময়ে যারা প্রশাসনিক ভবনে কাজ করেন তারা কেউই পরীক্ষা নেয়া কিংবা পরীক্ষা না নেয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন না। রবিবার (৮ নভেম্বর) প্রশাসনের যারা ঊর্ধ্বতন কর্ণধর (উপাচার্য, কোষা ধক্ষ্য, রেজিস্ট্রার) তারা কেউই উপস্থিত ছিলেন না। তবে যারা প্রশাসনিক কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না তারা কেন এভাবে প্রতিনিয়ত লাঞ্চিত বা অপমানিত হবে। আমাদের জিম্মি করে কি লাভ শিক্ষার্থীদের। বরং আমরা শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই কাজ করি। অথচ শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায় করতে এসে ডেপুটি রেজিস্ট্রার, সেকশন অফিসার কিংবা অন্য যেকোনো প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অফিস থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন যা সত্যি মর্মান্তিক ও দুঃখজনক। আজ আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে পারছি না। আমরা এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই”। সংস্থাপন শাখার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ফেরদৌস আলম, “আমাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা কাজে ফিরবো না। আমরা মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) পুনরায় সকাল ১১টায় কর্মবিরতি পালন শুরু করবো”।
পক্ষান্তরে, হাবিপ্রবির ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী মারুফ হাসান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা এভাবে বন্দি হওয়া নতুন কিছু নয়। আর এমনটাও নয় যে আমরাই প্রথম প্রশাসনিক ভবনে তালা মেরেছি। আমাদের ন্যায্য দাবী আদায়ের জন্য তারা এটাকে অনৈতিক বলেছে তার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি আমরা। আমাদের দিক থেকে আমরা যথেষ্ট নমনীয় ছিলাম। তাদের প্রতি এমনকি আমরা তাদের সাথে কোনো প্রকার বাক যুদ্ধেও জড়াইনি। তারা যে আমাদের যৌক্তিক দাবীকে অনৈতিক বলে একটা অপরাজনীতি করার চেষ্টা করছে তা বুঝতে বাকি নেই।
অন্যদিকে বলতে গেলে তাদের আমরা কখনো শত্রুপক্ষ ভাবিনি কিন্তু তারা নিজেরাই একটা পক্ষ তৈরি করে নিলেন। যখন ওনারা কর্মবিরতি দিয়ে থাকে স্টুডেন্টরা ভোগান্তিতে থাকে তখন সেটা অনৈতিক হয়না কিন্তু আমরা যোক্তিক দাবী করলে তারা এটাকে অনৈতিক বলাটা কোন যুক্তিতে আশে তা আমার বোধগম্য নয়! তাদের সার্বিক নিরাপত্তা তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবী করতে পারে কিন্তু আমাদের দাবী আদায়ের কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে এমন অবস্থান কর্মসূচি ন্যক্কারজনক। তাদের একটি কথা মনে রাখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা কর্মকর্তা হয়েছেন শিক্ষার্থীদের জন্যই। এখন তাহলে কি আমরা চোখে আংগুল দিয়ে তাদের বোঝাবো”।
এদিকে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধক্ষ্য অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র হালদার বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষার্থীদের এমন কর্মকান্ডকে অনৈতিক বলে মনে করি। তবে শিক্ষার্থীর দাবী পুরোপুরি যৌক্তিক এটি আমি বহুবার বলেছি। শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের অনেক পন্থা রয়েছে তাদের উচিত সেগুলো অবলম্বন করা। কিন্তু মানুষকে জিম্মি করে কোনো দাবি আদায় করা অত্যান্ত দুঃখজনক। তবে কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির বিষয়টি শুনেছি। কর্মকর্তা এভাবে কর্মবিরতি পালন না করে আলোচনার মাধ্যমে তাদের দাবি সমূহ তুলে ধরতে পারেন। আমরা আলোচনা সাপেক্ষে সমস্যা সমূহ সমাধান করার চেষ্টা করবো”।