সীমা চক্রবর্তীর বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। তার মা অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করেন। খুব অভাবে সংসার চলে। সীমা এস এস সি পরিক্ষার্থী, কিন্তু দুঃখের বিষয় বানের জলে সব শেষ হয়ে গেছে। টাকার অভাবে এসএসসির ফরম পূরণ করতে পারছিল না। শিক্ষক ও সহপাঠীদের সহযোগিতায় এ ধাক্কা সামলে উঠেছিলেন। কিন্তু এবার বুঝি আর শেষ রক্ষা হলো না! বানের জলে ভেসে গেছে সব বই। এসএসসি পরীক্ষায় বসা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে।
সীমা বলে, ‘বন্যার পানিতে বই নষ্ট অইগেছে। বাবা নাই। মা মানষর বাড়িত কাম করইন। বই কিনার সামর্থ্য নায়। পড়মু ক্যামনে?’
বসতঘরে পানি ঢুকে বেশ কিছু বই নষ্ট হয়ে গেছে এসএসসি পরীক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসের। ঢালারপাড় গ্রামের এই মেয়েটিরও বাবা নেই, অভিভাবক হওয়ার মতো কোনো ভাইও নেই। নতুন বই কেনার সামর্থ্যও নেই। অথচ আগামী আগস্টেই এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জান্নাতুল ফেরদৌস কীভাবে পরীক্ষা দেবে তা ভেবে উদ্বিগ্ন।
একই এলাকার আরেক এসএসসি পরীক্ষার্থী সুমাইয়া হক রিয়ারও একই অবস্থা। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রিয়ার সব বই পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। কীভাবে পড়াশোনা করবে, পরীক্ষা দেবে, ভাবতে পারছে না সে।
কোম্পানীগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে রুমা। তার বইও নষ্ট হয়ে গেছে। রুমা বলে, ‘বন্যার সময় পরিবারের সবার সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। এসে দেখি পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে বই-খাতা। যেকোনো দিন পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা হতে পারে। এখন আমি বই খাতা পাব কোথায়?’
কোম্পানীগঞ্জে এবারের ভয়াবহ বন্যায় সীমা চক্রবর্তী, জান্নাতুল ফেরদৌস, সুমাইয়া হক রিয়া ও রুমার মতো অনেক এসএসসি পরীক্ষার্থীর বই ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। কারও কারও বই ভেসে গেছে। কেউ কেউ প্রবেশপত্র খুইয়েছে। তাদের বিকল্প বই দেবে প্রশাসনের সে সুযোগও নেই। কারণ তাদের গুদামের বইও নষ্ট হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন দরিদ্র পরিবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষা আপাতত স্থগিত হলেও আগস্টে রুটিন দিলে পড়ার মতো বই কোথায় পাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সবাই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বদিউজ্জামান আহমদ বলেন, ‘শিক্ষা অফিসের গুদামে থাকা বইও নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ক্ষতি পোষাতে ঢাকা থেকে বই পাঠাতে হবে।’
স্কুল খোলার আগে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানা যাবে না উল্লেখ করে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘ঈদের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে। তখন ক্ষতির পরিমাণ জেনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। যাদের প্রবেশপত্র হারিয়েছে বা নষ্ট হয়েছে, তাদের দ্রুত সেগুলো সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং বলেন, ‘পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছি। যাদের বইপত্রের সমস্যা আছে, কেনার সামর্থ্য নেই, তাদের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে শিক্ষা অফিসকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
আমাদের ফেইসবুক Link : ট্রাস্টনিউজ২৪