বিশ্ববাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে । তাই এমন পরিস্থিতিতে স্পট মার্কেট অর্থাৎ খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত বন্ধ রেখেছে সরকার। আার তাই জ্বালানি এ পণ্যটির দাম না কমা পর্যন্ত দেশীয় গ্যাস থেকেই চাহিদা পূরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
গ্যাসসংকটের কারনে দেশের বেশ কিছু গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। যার ফলে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। তাই গত রবিবার থেকে হঠাৎ করে সারা দেশে বেড়ে গেছে লোড শেডিং।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দিনে ৫-৬ বার এবং গ্রামাঞ্চলে আট থেকে ১০ বার লোড শেডিং হচ্ছে। এদিকে আবাসিক এলাকায় কমে গেছে গ্যাসের চাপ, কোনো রকমে চলছে রান্নার চুলা। ব্যাহত হচ্ছে শিল্প-কারখানার উৎপাদনও।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, গত জুনের শেষ সপ্তাহে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনতে প্রতি ইউনিটে (এমএমবিটিইউ) খরচ হয়েছিল প্রায় ২৫ ডলার। সেটি এখন হয়ে গেছে প্রায় ৪০ ডলার। এ কারণেই সরকার স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ রেখেছে। এ অবস্থায় জাতীয় গ্রিডে যে পরিমাণ গ্যাস ঘাটতি হচ্ছে, তা দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে জোগান দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য বেশ কয়েকটি কূপে ওয়ার্কওভার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৩ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। গড়ে আমদানি করা হয় ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। তার মধ্যে দেশে উৎপাদিত গ্যাসক্ষেত্র থেকে আসে ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বাকিটুকু পূরণ করা হয় আমদানীকৃত এলএনজি দিয়ে। গত কয়েক দিন ধরে গ্যাসের সরবরাহ ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট কমিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে দুই হাজার ৭৫০ থেকে ২ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। গত মাসে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ করা হয় দৈনিক ৭৫০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। দুই দিন ধরে কমিয়ে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্যাসসংকটের কারণে গত কয়েক দিনে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। এদিকে জ্বালানি তেলের দামও অনের বেরে গেছে । দিনে ১০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান করছে বিপিসি। তাই তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও পুরোদমে চালানো যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে লোড শেডিং দিতে হচ্ছে। ’
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, জাপানের মতো দেশ এখন পরিকল্পিতভাবে দিনে ২ ঘণ্টা লোড শেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের অবস্থাও খারাপ। কারণ আমাদের যে নিজস্ব গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, তা চাহিদার অর্ধেকের চেয়ে কম। ’ তিনি বলেন, এখন যদি বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে এলএনজি ও জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয়, তাহলে উৎপাদন খরচ ৩-৪ গুণ বেড়ে যাবে। বর্তমান এই পরিস্থিতিতে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকানপাট বন্ধ রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল সেটি বাস্তবায়নসহ আরো বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
শেডিংয়ের বিষয়ে নাটোর জেলার লালপুর থানা থেকে আব্দুল আল মামুন বলেন, ‘রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত টানা ৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না, ১১টার দিকে বিদ্যুৎ আসে, চলে যায় ভোর সকালে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এসে দুপুর ১২টা বাজতেই আবার চলে যায়। টানা সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিদ্যুৎ আসে। সন্ধ্যায় আবার চলে যায়। ’
প্রতিমন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশ
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ রবিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে করেছেন অ সেখানে তিনি লিখেছেন, গ্যাসস্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে অনেক জায়গাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুনরায় স্বাভাবিক হবে। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির উচ্চমূল্য ও সরবরাহ অন্যান্য সব দেশের মতো আমাদেরও সমস্যায় ফেলেছে। এ পরিস্থিতিতে আপনাদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। ’
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশীয় গ্যাস উৎপাদনে নজর না দিয়ে এলএনজি আমদানিনির্ভরতার কারণেই আজ আমাদের এই সংকটের মধ্যে পড়তে হয়েছে।
আমাদের ফেইসবুক লিংক : ট্রাস্ট নিউজ ২৪