বিরল-দিনাজপুর-বোচাগঞ্জ সড়কের প্রবেশমুখ পুনর্ভবা নদীর কাঞ্চন ব্রিজের ওপর ৪ ঘণ্টা ধরে মানববন্ধন করেছেন জলাবদ্ধতার শিকার এলাকাবাসী। এ সময় সেতুর দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। পরে শুক্রবার (১৪ জুলাই) দুপুর একটায় পৌর প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে মানববন্ধন পালনকারীরা তাদের অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।
এর আগে সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচির কারণে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। বাধ্য হয়ে প্রশাসন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেয়।
জানা গিয়ছে, বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। এতে করে দিনাজপুর পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ডের পশ্চিম বালুয়াডাঙ্গা হঠাৎপাড়া এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। ৪-৫০০ বাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ড্রেনের ময়লা আবর্জনাসহ দূষিত পানি বাড়িঘরসহ দোকানে ঢুকে পড়ে। এ কারণে সারারাত ওই এলাকার মানুষ ঘুমাতে পারেননি।
শুক্রবার সকালে তারা পাশে দিনাজপুর বিরল-দিনাজপুর-বোচাগঞ্জ সড়কের প্রবেশ মুখ পুনর্ভবা নদীর কাঞ্চন ব্রিজের ওপর এসে অবস্থান নেন। ফলে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সকাল ৯টা থেকে শুরু করে দুপুর ১টা পর্যন্ত এই অবস্থা চলতে থাকলে প্রথমে পুলিশ ও পরে পৌরসভা এবং জেলা প্রশাসন এসে অবস্থানকারীদের একের পর আশ্বাস প্রদান করতে থাকে। এক পর্যায়ে ওই এলাকাবাসীর একমাত্র দাবি ড্রেনেজ ব্যবস্থা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চালু করার আশ্বাস দিলে এলাকাবাসী তাদের মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেন।
ভুক্তভোগী মর্জিনা জানান, প্রায় ৬ মাস আগে পশ্চিম বালুয়াডাঙ্গা হঠাৎপাড়া এলাকায় চঞ্চল নামে এক ব্যক্তি তার জমি নদীর ড্রেজিং করা বালু দিয়ে ভরাট করে। এসময় তার জমি ছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডের এবং পৌরসভার ড্রেন বালু দিয়ে ভরাট করে দখলে নেন চঞ্চল। এতে করে একটু বৃষ্টি হলেই এলাকাটি পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এ নিয়ে আমরা পৌরসভার মেয়য়ের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাইনি। বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি শুরু হলে কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। বাড়ির আসবাবপত্র থেকে শুরু করে সবকিছু ডুবে যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত রুবেল বলেন, বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে আমার বাড়িটি এরইমধ্যে দেবে গেছে। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। এরকম অনেক বাড়িতে ফাটল ধরেছে। আমরা চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা এলাকাবাসী আজকে এই মানববন্ধন ও অবস্থান নিয়েছি। প্রশাসন আমাদেরকে কথা দিয়েছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যদি না করা হয় তাহলে আবারও আমরা রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হবো।
দিনাজপুর কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে জনগণের উদ্দেশে বলেন, আমি এ অবস্থার কথা জানতাম না। বালু ফেলার কারণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার যে সমস্যা হয়েছে তা অতি দ্রুত সমাধান করা হবে। যত প্রভাবশালী হোক আমরা তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
দিনাজপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র আবু তৈয়ব আলী দুলাল বলেন, আপনারা যে দাবি নিয়ে আন্দোলন করছেন সেটি আপনাদের যৌক্তিক চাওয়া। আপনাদের চাওয়ার সঙ্গে আমি একমত পোষণ করে কথা দিচ্ছি শনিবার (১৫ জুলাই) সকালেই স্কেভেটর মেশিন দিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া ড্রেন খনন শুরু করা হবে এবং এখানে স্থায়ীভাবে ড্রেন নির্মাণ করা হবে।