সরকারি দল আওয়ামীলীগের সমর্থনপুষ্ট যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীকে অস্ত্র মামলায় ২৭ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ সোমবার (১২ অক্টোবর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ এ রায় ঘোষণা করেন।অস্ত্র আইনের ১৯ ধারায় পাপিয়া দম্পতিকে ২০ বছর ও ১৯(এফ) ধারায় ৭ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পৃথক দুই ধারায় দেওয়া সাজা একইসঙ্গে কার্যকর হবে বলে আদালত জানান।
এর আগে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর মামলাটির যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে একই আদালত রায়ের জন্য আজকের তারিখ ঠিক করা ছিল। গত ৯ সেপ্টেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি শেষে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায় বিচারের প্রার্থনা করেন।মামলাটিতে মোট ১৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মোট ১২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেছেন আদালত।
গত ২৩ আগস্ট একই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আদেশ দেন। এরপর গত ২৯ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১ এর এসআই মো. আরিফুজ্জামান ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এ চার্জশিট জমা দেন। আসামিদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। উল্লেখ্য, নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়া র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হবার একদিন পর (২৩ ফেব্রুয়ারী) সংগঠন থেকে তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
তাদে বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, গত ২২ ফেব্রুয়ারি দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করার সময় ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দু’জন সঙ্গীসহ পাপিয়া এবং তার স্বামীকে আটক করে র্যাব। ওই সময় তাদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, নগদ দুই লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ টাকার জাল নোট, ১১ হাজার ৪৮১ ডলার, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের কিছু মুদ্রা এবং দুটি ডেবিট কার্ড জব্দ করে। পরে পাপিয়ার ফার্মগেটের ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ২০টি গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে পৃথক ৫টি মামলা রুজু করা হয়।
পাপিয়াকে গ্রেপ্তারের পর পরই ২৩ ফেব্রুয়ারি র্যাবের পক্ষ থেকে এ সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়েছিল, পাপিয়া আন্ডার ওয়ার্ল্ডের মাফিয়া চক্রের সদস্য। পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবসাসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ব্যবহার করে পাপিয়া বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। একজন মুসলিম নারী হয়েও নিয়মিত কালীপূজা করত পাপিয়া। তারা দীর্ঘদিন যাবত জাল টাকা প্রস্তুতসহ নরসিংদী ও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও নারীসংক্রান্ত অনৈতিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। এছাড়াও নরসিংদী জেলার বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে চাঁদাবাজি করে আসছিল পাপিয়া ও তর স্বামী সুমন।
র্যাব বলেছে, বছরের অধিকাংশ সময় সে নরসিংদী ও রাজধানীর বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করতো। গুলশানে অভিজাত একটি হোটেলের ২১ তলায় তার দুটি রুম ভাড়া নেওয়া ছিল। সেখান থেকে সে ও তার স্বামী ব্যাবসায়িক অংশীদারদের নারী সরবরাহ করতো। সমাজ সেবার নামে অসহায় নারীদের আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সহযোগিতার নামে তাদের অনৈতিক কাজে লিপ্ত করতো।