রংপুরে প্রচণ্ড খরতাপ। কাঠফাটা রোদ। বইছে গরম হাওয়া। দিনাজপুরেও কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে ৩৬-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ অবস্থায় দিনে-রাতে গড়ে সাত ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ লোকজন। ব্যবসা-বাণিজ্যে ভাটা পড়েছে। শহর থেকে গ্রামের লোকজন বেশি ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
রংপুর নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) ও পল্লী বিদ্যুৎ সূত্র জানায়, গত বুধবার জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল প্রায় ২৬০ মেগাওয়াট। এই চাহিদার বিপরীতে ১৩০ থেকে ১৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ চাহিদার অর্ধেক সরবরাহ হয়েছে। ফলে অধিকাংশ এলাকা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এদিকে গত ৭ দিন আগে ২৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎই পাওয়া যেত। দুদিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ কম হওয়ায় রংপুরে লোডশেডিংয়ের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে।
বুধবার রাত ৮ টার দিকে জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট, সবচেয়ে বড় পাইকারি ব্যবসার স্থান নবাবগঞ্জ বাজার, বেতপট্টি এলাকাসহ আশপাশের স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল না। এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক দোকানেই চলছে ডিজেলচালিত পাম্প।
সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মকসুদার রহমান বলেন, প্রচণ্ড গরম, তার ওপর লোডশেডিং। এতে দোকানে মানুষজনের উপস্থিতিও কম। তাই বেচাবিক্রি কমে গিয়েছে।
রংপুরে নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, ‘আমি গতকাল বুধবার দুপুরে সবেমাত্র এখানে নতুন যোগদান করেছি। এটি একটি বিভাগীয় শহর। তাই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার চেষ্টা করব।’
দিনাজপুর পৌর শহরের বালুয়াডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা বর্ষা রহমান (৩৮) বলেন, ‘বুধবার দুপুর থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত অন্তত ১০ বার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করেছে। বলতে গেলে প্রতি এক ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং। অসহ্য গরমে আর মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। গরমে বাচ্চাদের পড়াশোনা তো দূরের কথা, ঠিকমতো ঘুমাতেই পারছে না।’
নেসকো-১–এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুর রহমান বলেন, ডিভিশন-১–এ বিদ্যুতের চাহিদা ১৯ মেগাওয়াট। গত ২৪ ঘণ্টায় সরবরাহ পেয়েছেন ১৩ মেগাওয়াট। লোডশেডিং দিতে হয়েছে ৬-৭ ঘণ্টা।
নেসকো-২–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামাল বলেন, তাঁর এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ৩০ মেগাওয়াট। গত ২৪ ঘণ্টায় সরবরাহ ছিল ১২-১৪ মেগাওয়াট। জরুরি সেবার আওতায় নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৭ ঘণ্টা বিদ্যুতের লোডশেড দিতে হয়েছে। পিক আওয়ারে তাঁদের বিদ্যুতের চাহিদা ১১৫ মেগাওয়াট। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ৭৫-৮০ মেগাওয়াট। অন্যদিকে অফপিকে চাহিদা ৯৫ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে ৭০ মেগাওয়াট। সরবরাহ যা পাচ্ছেন, তা এলাকাভেদে সমবণ্টনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।