কবরস্থান ও শ্মশানে সাদা গাড়ির বহর। সৎকারের জন্য সারি সারি লাশ নিয়ে অপেক্ষা করছেন স্বজনেরা। বিরাম নেই, বিশ্রাম নেই- টানা কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন সৎকার কর্মীরা। তারপরও কমছে না লাশের সারি। সময়ের সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লাশের সংখ্যাও।
ভারতে করোনা পরিস্থিতি নারকীয় হয়ে উঠেছে। অপর্যাপ্ত জরুরি পরিষেবা আরও বেশি মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করছেন দেশটির সাধারণ মানুষ। ভারতীয়রা বলছেন, আমরা কেন ভয় পাব না বলতে পারেন? কি হচ্ছে তা তো দেখতেই পাচ্ছি। অক্সিজেন নেই, হাসপাতালে বেড নেই, অ্যাম্বুলেন্সেই রোগী মারা যাচ্ছ। শ্মশানে চিতা জ্বালানোর মতো কাঠও নেই।
বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী দিল্লি যেন লাশের নগরীতে পরিণত হয়েছে। সেখানে প্রতিদিন প্রায় ৭০০ মানুষ মারা যাচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই সংখ্যা শিগগিরই হাজার ছাড়াবে। যদিও ইতোমধ্যেই শহরের বিভিন্ন শ্মশানের বাইরে রাস্তায় টোকেন নিয়ে মৃতদেহের দীর্ঘ লাইন পড়েছে। কমপক্ষে ২০ ঘণ্টা কেটে যাচ্ছে লাশ চিতায় তুলতে। শ্মশানে শ্মশানে ঘুরে সিরিয়াল না পেয়ে বরফ চাপা দিয়ে ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় বাড়িতে রাখতে হচ্ছে লাশ। কুকুরের দেহ পোঁতার জায়গা ব্যবহার করা হচ্ছে মানুষকে দাহ করার জন্য। সৎকারের জন্য রাখা সারি সারি লাশে কুকুরকেও হামলা চালাতে দেখা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি গাজিয়াবাদ জেলা আদালতের এক কর্মীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হিন্দোন শ্মশানে। মৃত ব্যক্তির সহকর্মী ত্রিলোকী সিংহ জানিয়েছেন, তারা সকাল ৮টায় পৌঁছনোর পর টোকেন দেওয়া হয় বেলা দশটার। কারণ লম্বা লাইন পড়েছে। পরে সেই টোকেন বদলে নতুন সময় দেওয়া হয় সন্ধ্যা ৬টায়।
এ সময় তারা দূরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎই এক স্থানীয় ব্যক্তি এসে খবর দেন, রাস্তার কুকুর এসে মৃতদেহ ছিঁড়ে খাচ্ছে। দৌড়ে যান তারা। সেই ছবি ও খবর প্রকাশ হওয়ায় দিল্লি সরকারকে অসস্তিতে ফেলেছে। ছবিটি শেয়ার করে কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা এক টুইটে লিখেছেন, মানুষের দেহের উপর দাঁড়ানো কোনো সরকার মজবুত হতে পারে না। অন্তিম সংস্কারের জন্য এই অন্তহীন অপেক্ষা শাসকের পাষাণ হৃদয়কেই তুলে ধরছে।
আমাদের ফেইসবুক Link : ট্রাস্টনিউজ২৪