এবার দেশে প্রথমবারের মতো উদ্ধার হয়েছে ডায়েমেথিল ট্রাইপ্টেমিন বা ডিএমটি নামক ভয়ঙ্কর এক মাদক। দীর্ঘ গোয়েন্দা নজরদারি ও তদন্তের ভিত্তিতে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা থেকে নিষিদ্ধ মাদক এলএসডি ও ডিএমটিসহ চার মাদক কারবারিকে গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানিয়েছে র্যাব-২।
গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ৪০ ব্লট আলোচিত মাদক এলএসডি, নতুন মাদক ডিএমটি ৬০০ মিলিগ্রাম, আমেরিকান ক্যানাবিজ ৬২ গ্রাম এবং মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি জাব্দ করা হয়। গ্রেফতাকৃতররা হলেন- সৈয়দ মঈন উদ্দিন আহমেদ ওরফে শাদাব (২৯), আব্রাহাম জোনায়েদ তাহের (২৫), স্বপ্নীল হোসেন (২২) ও সিমিয়ন খন্দকার (২৩)। রবিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম।
তিনি বলেন, বিদেশে পড়ালেখা করার জন্য অবস্থানকালেই সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তানরা জড়িয়ে পড়ছে ভয়ংকর সব নতুন মাদকে। কেউ থাইল্যান্ডে গিয়ে নতুন মাদক ডিএমটি’তে আসক্ত হচ্ছে, কেউ আবার লন্ডনে গিয়ে এলএসডি সেবনে আসক্ত হচ্ছে। পড়াশুনা শেষে দেশে ফিরলেও আসক্তি থেকে পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে দেশে আমদানি করছে এলএসডি ও ডিএমটি।
এই কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি মাদক চোরাকারবারি ও মাদকসেবীরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করছে। বিশেষ করে সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রচলিত নয় কিন্তু বিভিন্ন উন্নত দেশে প্রচলিত এমন কিছু মাদকের ব্যবহার বাংলাদেশে পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং ধীরে ধীরে আমাদের যুবসমাজ এতে আসক্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি ও ছায়া তদন্তের ভিত্তিতে শনিবার (২৬ জুন) রাত সাড়ে ১১টার দিকে র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-২ এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন লাভ রোড এলাকা হতে ওই চার যুবককে করে।
তিনি আরও বলেন, এলএসডি সম্পর্কে ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি। এটি মূলত বিদেশ থেকে পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে বাংলাদেশে আনা হয় এবং উচ্চমূল্য হওয়ায় মূলত এর ব্যবহারকারী উচ্চবিত্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অপরদিকে উদ্ধার করা নতুন মাদক ডিএমটি, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যার নাম Dimethyl Tryptamine। এটি একটি হ্যালুসিনোজেনিক ট্রিপটামাইন ড্রাগ। মূলত এটি মুখ দিয়ে এলএসডি সেবনের মতো, যা ধোঁয়ার মাধ্যমে শ্বাস নিয়ে বা ইনজেকশনের সঙ্গে নেয়া যায়। এটি সেবনের পর ৩০ থেকে ৪০ মিনিট গভীর হ্যালুসিনেশন তৈরি করে। এটি সেবনের পর দ্রুত হ্যালুসিনেশন হয় এবং তারা কল্পনার জগতে প্রবেশ করে। মূলত এ থেকে মারাত্মক দুর্ঘটনা হতে পারে, এমনকি জীবননাশও হতে পারে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, ‘গ্রেফতার সৈয়দ মঈন উদ্দিন আহমেদহ শাদাব রাজধানীর উত্তরায় স্থানীয় এক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল হতে ‘এ’ লেভেল শেষ করার পর ভারতের দার্জিলিং এ ২০১৩ সালে ‘ও’ লেভেল পড়াশোনা করে। এরপর সে ২০১৫ সালে বিবিএ পড়ার জন্য থাইল্যান্ডে যায়।’‘এরপর এক বছর সে থাইল্যান্ডে বিবিএ পড়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সঙ্গে এলএসডি ও ডিএমটি মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে বাংলাদেশে এসেও ওই মাদক গ্রহণ ও সংগ্রহ অব্যাহত রাখে। শাদাব মূলত এই ড্রাগ বিদেশ থেকে বিভিন্ন পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে নিয়ে আসে এবং বাংলাদেশে নিজে গ্রহণ ও বিক্রি করে।’
তিনি আরও বলেন, অপরদিকে আব্রাহাম জোনায়েদ তাহের রাজধানীর এক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে ‘এ’ লেভেল শেষ করে মালেয়েশিয়া গমন করে। ২০১৫-১৬ সাল পর্যন্ত পড়ালেখার জন্য অবস্থান করে। পরবর্তীতে সে উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে গমন করে। সেখানে সে নিয়মিত এলএসডি ও ডিএমটি গ্রহণ করতো। সেখান থেকে এমবিএ শেষ করে ২০২০ সালে বাংলাদেশে ফেরত আসে এবং বাংলাদেশে নিয়মিত এলএসডি ও ডিএমটি গ্রহণ ও বিক্রি করে। এছাড়া গ্রেফতার স্বপ্নীল হোসেন এবং সিমিয়ন খন্দকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত রয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তা সাইফুল আলম বলেন, ‘ব্যবহারকারী সমুদ্র সৈকতে, পাহাড়ি রিসোর্টে বা কোনো বিনোদন কেন্দ্রে প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই মাদকের ব্যবহার করে থাকে বলে গ্রেফতাররা জানিয়েছে।’
এসব নতুন নতুন মাদক ছড়িয়ে পড়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এর আগে এলএসডি মাদক জব্দ হয়েছে। সেবনকারী ও ব্যবহারকারী গ্রেফতার হয়েছে। তবে ডিএমটি নামক এই মাদক এর আগে আগে কখনো জব্দ হয়েছে বলে জানা যায়নি। প্রকৌশল বা রাসায়নিক গবেষণাগারেও এই মাদক তৈরি করা সম্ভব।