বরিশালগামী একটি লঞ্চের কেবিনে শারমিন আক্তার খুনের রহস্য উদঘাটন করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। শারমিনকে খুন করার জন্যই লঞ্চের কেবিন ভাড়া করেছিল তার স্বামী মো. মাসুদ হাওলাদার। কাশির সিরাপের সঙ্গে বিষ খাওয়ানোর পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় শারমিনকে।
র্যাবের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৫ অভিযান চালিয়ে সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) ভোরে কক্সবাজার শহর থেকে মাসুদকে গ্রেপ্তার করেছে।
র্যাব জানায়, ১০ ডিসেম্বর সকালে ঢাকা-বরিশাল পথে চলাচলকারী এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চের কেবিন থেকে এক তরুণীর লাশ উদ্ধার হয়। পরদিন নিহত তরুণীর বাবা বাদী হয়ে বরিশালের কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরদিনউ র্যাব-৮ লঞ্চের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আসামিকে শনাক্ত করে।
খন্দকার আল মঈন জানান, মাসুদ ২০১২ সাল থেকে আশুলিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানে পিকআপের হেল্পার হিসেবে কর্মরত। ২০১৯ সালের শুরুতে শারমিন বিমানবন্দর থানায় মাসুদের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলা করেছিল। ওই মামলার নিষ্পত্তির জন্য উভয় পরিবারের সম্মতিতে ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর শারমিন ও মাসুদের বিয়ে হয়। অভিযুক্ত মাসুদের শারমিনের সঙ্গে সংসার করার ইচ্ছে ছিল না। এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো।
১৫-২০ দিন আগে শারমিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে এবং মাসুদ শারমিনের এই কাশির সিরাপের সঙ্গে বিষ খাওয়ানোর পরিকল্পনা করে।
তারপর মাসুদ শারমিনকে বিভিন্নভাবে ফুঁসলিয়ে নলছিটিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করতে থাকে। পরে শারমিন ৯ ডিসেম্বর মাসুদের সঙ্গে বরিশালে যাওয়ার জন্য রাজি হয়। সেদিন দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে মাসুদ ও শারমিন মিরপুর-১ থেকে সদরঘাটে যায়। হত্যার সময় যাতে শারমিনের চিৎকার আশপাশের কেউ শুনতে না পায়, সেজন্য লঞ্চের নিচতলায় লস্কর কেবিন ভাড়া করে মাসুদ।
রাত ৯টায় এমভি কুয়াকাটা-২ বরিশালের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। এ সময় মাসুদ তার সঙ্গে থাকা বিষযুক্ত কাশির সিরাপ শারমিনকে খাওয়ায়। এতে শারমিন তিন-চার বার বমি করে দুর্বল হয়ে যায়। পরে জোরপূর্বক অবশিষ্ট বিষ শারমিনেকে খাওয়ারনোর চেষ্টা করে মাসুদ ।
কিছুসময় পর শারমিন মৃত্যুযন্ত্রণায় হাত-পা ছুড়তে থাকে। তখন কেবিন বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে লঞ্চের রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেতে যায় মাসুদ। রেস্টুরেন্ট থেকে ফিরে মাসুদ কেবিনের সামনে এসে দেখতে পায় যে, শারমিন কেবিনের দরজার ফাঁক দিয়ে বিষের বোতলটি ফেলে দিয়েছে। মাসুদ তখন পানি দিয়ে কেবিনের দরজার সামনে পড়ে থাকা বিষ পরিষ্কার করে কেবিনে ঢোকে। তখনও শারমিনের শ্বাস-প্রশ্বাস চলছিল।
মাসুদ ব্যাগ থেকে তার শার্ট বের করে শ্বাসরোধে শারমিনের মৃত্যু নিশ্চিত করে। লঞ্চ যখন চরমোনাই ঘাটে পৌঁছায়, তখন মাসুদ কেবিন থেকে বের হয়ে লঞ্চের দরজায় অবস্থান নেয়। লঞ্চ বরিশাল নৌ বন্দরে পৌঁছালে মাসুদ লঞ্চ থেকে নেমে সড়কপথে নিজ বাড়িতে চলে যায়।
আমাদের ফেইসবুক Link ট্রাস্ট নিউজ ২৪