দশ মাসের দুধের শিশুসহ স্ত্রীকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামীর বিরুদ্ধে। কোথাও যাওয়ার জায়গা না পেয়ে স্ত্রীও নিরুপায় হয়ে স্বামীর সুরম্য অট্টালিকার সামনে দুই সন্তানসহ বসে আছেন। নাওয়া নেই-খাওয়া নেই। এভাবে কেটেছে এক রাত।
শ্বশুরবাড়ির লোকজন আর এলাকার মাতবরদের জঘন্য আচরণের কাছে ঝড় বৃষ্টি আর মশার কামড় ছিল অতি তুচ্ছ। এমন অমানবিক দৃশ্যের দেখা মিলেছে কক্সবাজার শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজিবি ক্যাম্পসংলগ্ন সিকদারপাড়ায়।
ভুক্তভোগী জানায়, শনিবার রাত ৮টার দিকে কক্সবাজার শহরের বিজিবি ক্যাম্প সিকদারপাড়ার মাস্টার ফরিদুল আলমের ছেলে মো. ওসমান গণির (৪৫) নির্দেশে অপরাপর ভাইদের সহযোগিতায় স্ত্রী জোনাকি আক্তারকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেন। পরে জোনাকি আক্তার উপায় খুঁজে না পেয়ে স্বামীর বাড়ির সামনেই দুগ্ধপোষ্য দশ মাসের শিশুসহ দুই সন্তানকে নিয়ে রাত কাটায়।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, অভিযুক্ত ওসমান গণী কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোনে অবস্থিত সি উত্তরা নামে কালো তালিকাভুক্ত একটি হোটেলে ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরি করেন। সেই সুবাদে তিনি অসংখ্য নারীকে নানাভাবে প্রলোভনে ফেলে ওই হোটেলের বিলাসবহুল রুমে নিয়ে গিয়ে যৌন লালসা চরিতার্থ করেন।
এদের মধ্যে একজন হলেন ভুক্তভোগী জোনাকি আক্তার। ৩ বচর আগে ওসমান গণি ভুক্তভোগী জোনাকির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেন। দীর্ঘদিন লিভটুগেদার করার পর জোনাকিকে রক্ষিতা হিসেবে থাকার প্রস্তাব দেন ওসমান।
অন্যদিকে জোনাকি সামাজিক মর্যাদার দাবিতে বিয়ের জন্য চাপ দেন ওসমানকে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন ওসমান। পরে কক্সবাজারের তারাবনিয়ারছড়ার কাজী অফিসে ২০২১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছু দিন যেতে না যেতে যৌতুক দাবি করে জোনাকিকে মানসিকভাবে চাপ দিতে থাকেন ওসমান।
সর্বশেষ ওসমানের বাবা ও ভাইয়েরা মিলে জোনাকিকে টেনেহিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে দেন এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন।
ভুক্তভোগী জোনাকি জানান, তার আগের একটি সংসার ছিল। প্রবাসী স্বামীর ওই সংসারেও মনোমালিন্য চলছিল। বিষয়টি জানত ওসমান। তখন ওসমান তাকে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আগের সংসার ত্যাগ করতে চাপ দিতে থাকে। তার প্রতিশ্রুতির ওপর আস্থা রেখে পূর্বের সংসার ত্যাগ করে ওসমানের সংসারে আসে।
কিন্তু ওসমান সংসারের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ না করে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। পরকীয়ায় বাধা দিলে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। কিন্তু তাকে এত টাকা যৌতুক দেওয়ার মতো সামর্থ্য তার নেই। যৌতুক দিতে অস্বীকৃতি জানালে গত শুক্রবার দুধের শিশু ও আরও এক সন্তানসহ ঘর থেকে মারধর করে বের করে দেয়। জোনাকি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
এ ঘটনায় তিনি প্রতিকার চেয়ে কক্সবাজার আদালতে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় বিবাদী ওসমানকে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর সশরীরে তলব করেছেন আদালত।
স্থানীয়রা জানান, ওসমান সমাজ কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একসময় তিনি খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করতেন। কিন্তু পরকীয়া এবং নারীদের সঙ্গে অবাধ মেলামেশার কারণে প্রথম স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দেন এবং ১০ মাসের এক কন্যাশিশুও তার কাছে রেখে চলে যান। বর্তমানে ওই কন্যাসন্তানটি তার প্রেমিকা ফারজানা ইসলাম নামে এক বিধবা নারীর কাছে রয়েছে। ফারজানা বর্তমানে ওসমানের রক্ষিতা হিসেবে ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে একাধিক সূত্র দাবি করেছে।
এদিকে অভিযুক্ত ওসমান গণির বক্তব্য জানতে ফোনে না পেয়ে সরাসরি যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ওসমান বাড়ি থেকে পলাতক থাকায় তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে তার কর্মস্থল হোটেল সি উত্তরায় যোগাযোগ করা হলে সেখানেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে সেখানেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
ছিদ্দিক নামে হোটেলটির এক কর্মকর্তা জানান, তিনি আজ হোটেলে আসেননি।
এ ছাড়া ওসমানের পরিবার থেকে তার বাবা ফরিদুল আলম দাবি করেন, মেয়েটাকে আমার ছেলে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে। সুতরাং মেয়েটার এখন এই ঘরে থাকার সুযোগ নেই।
ডিভোর্সের দাবির পক্ষে বৈধ কোনো কাগজপত্র রয়েছে কিনা জানতে চাইলে ফরিদ চট্টগ্রাম আদালত কর্তৃক সত্যায়িত একতরফা রায়সংবলিত তালাকনামার একটি কাগজ দেখান।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সেলিম উদ্দিন জানান, এ ধরনের ঘটনায় পুলিশের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। তবে ভিকটিম যদি সরাসরি থানার সহায়তা চান, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এ ছাড়া এনজিও মানবাধিকার সংগঠনগুলো দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে এলে ভিকটিমের আইনি সহায়তা পেতে কিছুটা সহজ হয়।
আমাদের ফেইসবুক লিংক : ট্রাস্ট নিউজ ২৪