বাগেরহাট শহরের সাহাপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন গোবরদিয়া সড়কের পাশে মো. রুস্তম মল্লিকের দোকানে শুয়ে আছেন ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ নারী। তার চোখে-মুখে অসহায়ত্বের ছাপ। পরিচয় জানতে চাইলে তিনি জানান, জমিসংক্রান্ত কারণে ছোট ছেলে এখানে রেখে গেছেন। কোথাও যাওয়ার উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে এই পরিত্যক্ত দোকানে আছেন। তাও আবার বছর খানেক। নাম তার গোলেনুর বেগম (৬৩)।
শীত কিংবা বর্ষা, এই ঝুপড়ি দোকানেই কেটে যায় তার দিনরাত, বছর। জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় এসে যাকেই দেখেন নিজের জায়গা এনে দিতে বলেন, যাতে ছেলেদের কাছে ফিরতে পারেন। ঝালকাঠি জেলার নলসিটি উপজেলার ভবানীপুর এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা লতিফ মোল্লার স্ত্রী। জামাল ও মোস্তফা মোল্লা নামের দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বছর বিশেক আগে অভাবের তাড়নায় বাগেরহাটে আসেন। বাগেরহাট জেলখানায় রান্না-বান্নাসহ ধোয়ামোছার কাজের পাশাপাশি মানুষের বাড়িতেও কাজ করতেন তিনি।
এর মধ্যে ছেলেরাও কাজের তাগিদে মাকে ছেড়ে বাপের ভিটায় গিয়ে উঠেছেন। নাড়ির টানে মা গোলেনুর বেগম সেখানে গেলেও সেখানে ঠাঁই হয়নি অসহায় এই নারীর। গোলেনুর বেগমের অভিযোগ অনুযায়ী বাদেকাড়াপাড়ায় সরেজমিনে জানা যায়, তিনি অনেক বছর আগে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে এ এর খান নামের একজন মুহুরি ও স্থানীয় চান মিয়ার সহযোগিতায় একটি জমি ক্রয় করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তার জমি বেদখল হয়ে যায়।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, এ আর খান সেই জমি অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছে। যেহেতু বেগম নিতান্তই অসহায়, সেক্ষেত্রে তিনি ন্যায়বিচার পাবেন কিনা সে বিষয়েও সন্দেহ প্রকার করেন তারা। স্থানীয় ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা খাবার, বস্ত্র, পাঁচ-দশ টাকা দিয়ে সহায়তা করেন গোলেনুর বেগমকে। তাদের এই সামান্য সহায়তাতেই কোনোমতে বেঁচে আছেন তিনি.
আবুল কালাম আকন নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই তিনি (গোলেনুর বেগম) আমাদের এখানে এই দোকানের সামনে বসবাস করেন। আমরা এলাকাবাসী সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করি। শুনেছি তার বাদেকাড়াপাড়া এলাকায় একটি জমি আছে। কিন্তু জমিটি কারা যেন দখল করে নিয়েছে।আত্মীয়স্বজনকেও দেখিনি এখানে আসতে। তবে এই শীতে যদি একটু ভালো জায়গায় থাকার ব্যবস্থা না করা যায় তবে যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। ঝালকাঠির নলসিটি উপজেলার ভবানীপুরে থাকেন গোলেনুর বেগমের ছোট ছেলে জামাল মোল্লা।
মোবাইল ফোনে জামাল জানান, ছোটবেলায় আমরা বাগেরহাটে থাকতাম। নদীতে নৌকা ছিল আমাদের। ২০ বছর আগে মালামালসহ নৌকা ডুবে গেলে আমরা নিঃস্ব অবস্থায় ঝালকাঠি চলে আসি। কিন্তু আমার আম্মা রয়ে যায় বাগেরহাটে। সেখানে একটি জমি কিনেছে, কিন্তু সেই জমিও দখল করে নিয়ে গেছে প্রভাবশালীরা বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রিজিয়া পারভীন বলেন, আমরা অসহায় গোলেনুর বেগমের কথার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে বাদেকাড়াপাড়া এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি এবং অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। আমরা খুব দ্রুতই সব পক্ষকে নিয়ে বসব, যাতে গোলেনুর বেগম তার প্রাপ্য জমি ফিরে পান।
আমাদের ফেইসবুক Link : ট্রাস্ট নিউজ ২৪