দিনাজপুরের পার্বতীপুরে খনি থেকে রেলপথে পাথর সরবরাহে ভবানীপুর রেলস্টেশন থেকে মধ্যপাড়া পর্যন্ত নির্মিত ১৪ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথের ৫ কিলোমিটার রেললাইন চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে পার্বতীপুর রেলপুলিশ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী এবং রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তাদের কার্যত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই। তারা যেন একরকম হাত-পা গুটিয়ে নীরবে বসে থেকে ইংগিত করছে ‘রেলের মাল দরিয়ায় ঢাল’। ফলে মধ্যপাড়া এলাকায় একটি চিহ্নিত সিন্ডিকেটের আশীর্বাদে নির্বিঘ্নে চলছে রেললাইন চুরি।
৮ আগস্ট রাত ৯টার দিকে রেলের ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলী (পথ) আল-আমিন বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারেন মধ্যপাড়ায় দীর্ঘ এলাকাজুড়ে রেললাইন কেটে রাখা হয়েছে। এ সংবাদে তার স্টাফ জিআরপি থানার এসআই সাজিদুল ইসলাম সাজিদ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর এসআই মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে একটি দল অভিযানে যায়। দলটি রাত ১১টার দিকে দক্ষিণ হরিরামপুর আদিবাসীপাড়ার কাছে মৌলভীর ডাঙ্গায় রেলপথের পাশের জমিতে খড় দিয়ে ঢেকে রাখা ৮ ফুট লম্বা ৪৬টি রেললাইন দেখতে পায়।
চোরেরা এগুলো অন্যত্রে নিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করছিল। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে চোরেরা পালিয়ে গেলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মধ্যপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বে রেললাইনগুলো রেখে পার্বতীপুর শহরে ফেরে দলটি। যদিও তারা এখন এ বিষয়টি অস্বীকার করছেন।
জানা গেছে, পরদিন সকালে এইএনসহ সবাই রেললাইনগুলো আনতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখতে পান, সেগুলো সেখানে নেই। এ ঘটনায় রেলের প্রকৌশল বিভাগের প্রধান বা দায়িত্বশীল কেউ বাদী না হয়ে জনৈক নুরুজ্জামান প্রামাণিককে বাদী করা হয়। তিনি কোনো মালামাল উদ্ধার না দেখিয়ে নামকাওয়াস্তে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে জিআরপি থানায় চুরির মামলা করেন। ঘটনার ২২ দিন অতিবাহিত হলেও রেলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চুরি যাওয়া রেললাইন উদ্ধার করতে পারেনি। গ্রেফতার করেনি কোনো আসামিকেও।
উদ্ধার মালামালগুলো রাতেই কেন জব্দ করে থানায় নেওয়া হয়নি-এমন প্রশ্ন করা হলে তিন পক্ষই পরস্পরের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। নিজেরা কোনো দায় নিচ্ছে না। খণ্ডিত ৪৬টি রেলপাতের ওজন প্রায় ৫ টন-যার মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। চুরি যাওয়া ৫ কিলোমিটার রেলপথে যে মালামাল চুরি হয়েছে সেগুলো স্থাপন করতে রেলের খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। এখন বাকি ১০ কিলোমিটার রেলপথের স্লিপার ও রেলপাতগুলো সিন্ডিকেটের মদদপুষ্ট চোরদের ভোগে পরিণত হয়েছে।
এ বিষয়ে জিআরপি থানার ওসি নুরুল ইসলাম জানান, মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে।
প্রকৌশলী আল-আমিন বলেন, আমরা তো বাদী। উদ্ধার বা আসামি গ্রেফতারের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।
স্থানীয় প্রতিনিধি ও কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তির অভিযোগ, চুরি, উদ্ধার, ফের চুরি এবং বিক্রির ঘটনা একই রাতে ঘটেছে। এসবে বাদী-বিবাদী, সাক্ষী সবাই জড়িত। নিরপেক্ষ ঊর্ধ্বতন একটি কমিটি করে রেললাইন চুরির ঘটনাটি তদন্ত হওয়া দরকার। তাহলেই থলের বেড়াল বেরিয়ে আসবে।
উল্লেখ্য, স্বল্প খরচে মধ্যপাড়া খনি থেকে রেলপথে পাথর সরবরাহ করতে খনিজ ও রেলপথ মন্ত্রণালয় ভবানীপুর রেলস্টেশন হয়ে পার্বতীপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত সাড়ে ৪৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করে। ২০০৫ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে তা ২০০৯ সালে শেষ হয়। ওই বছরেই রেলপথটি খনি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অল্প কিছুদিন ওই পথে পাথর পরিবহণ করা হলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৩ সালে থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা রেলপথটি এখন সিন্ডিকেটের চুরির খোরাকে পরিণত হয়েছে।
আমাদের ফেইসবুক লিংক : ট্রাস্ট নিউজ ২৪