
খানসামায় উপ-নির্বাচনে জমে উঠেছে ভোটের প্রচার-প্রচারণা, চলছে চুলচেরা বিশ্লেষন
(নৌকা মার্কার প্রার্থী সফিউল আযম চৌধুরী লায়ন ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সহিদুজ্জামান শাহের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস)
মোরশেদ উল আলম, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি ঃ দিনাজপুরের খানসামায় আগামী ১৫ জুন উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন হাট-বাজার, চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন স্থানে চুলচেরা বিশ্লেষন ও বেশ সরব আলোচনা শুরু হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের লোকজন ও আত্মীয় স্বজন নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে জনসমর্থন বাড়াতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা বাড়াতে অতীতের ভালকাজ ও ভাল ব্যবহার, ভাল গুনাগুন, মিশুকতা, ভদ্রতা, নম্রতা, ভাল আচরণ, কথাবার্তা, চালচলন, কথা বলা ও চলার স্টাইল, বংশ-মর্যাদা, শিক্ষা, পোশাক পরিচ্ছদ, অর্থ সম্পদ ইত্যাদি সব মিলিয়ে বিচার বিশ্লেষন করে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বিরামহীনভাবে ছুটে চলছেন প্রার্থী, সমর্থক ও কর্মীরা। সাদা-কালো পোস্টারে ছেয়ে গেছে প্রতিটি ওয়ার্ড, অলিগলি ও ফাঁকা জায়গা। নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে উপজেলার মানুষের মধ্যে। হোটেলে চায়ের আড্ডায় চলছে সম্ভাব্য ফলাফলের চুলচেরা বিশ্লেষণ। আলোচনা চলছে কে নির্বাচিত হবেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান! কাকে নির্বাচিত করলে হবে উপজেলার উন্নয়ন?
জানা গেছে, গত ২৫ এপ্রিল উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিকারীরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সফিউল আযম চৌধুরী লায়ন, স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীক নিয়ে দু’বারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সহিদুজ্জামান শাহ, মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শরিফুল ইসলাম প্রধান এবং হেলিকপ্টার প্রতীক নিয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্বাস আরেফিন শাহ।
গত কয়েকদিনে খানসামা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ও এলাকায় ব্যাপক স্বাক্ষাতকার, আলোচনা করে জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সফিউল আযম চৌধুরী লায়ন নৌকা মার্কার প্রার্থীর সঙ্গে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সহিদুজ্জামান শাহের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। উপজেলায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি ব্যাপক উন্নয়ন করায় উপজেলায় আলাদা ভোট ব্যাংক তৈরী হয়েছে। এছাড়াও আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ বিভেদ দ্বন্দ্ব ভূলে প্রায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় জনসমর্থন বেড়েছে। অন্যদিকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সহিদুজ্জামান শাহের মরহুম পিতা আকবর আলী শাহের ব্যাপক জনপ্রিয়তার পুঁজি করে ওই পরিবারের নিদ্রিষ্ট ভোট ব্যাংক রয়েছে। তাছাড়াও উপজেলায় বিএনপিরও নিদ্রিষ্ট ভোট রয়েছে। বিএনপি জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শরিফুল ইসলাম প্রধান কে সমর্থন দেয়ায় ত্রি-মূখী লড়াই হতে পারে।
কয়েকজন প্রবীণ গণ্যমান্য ব্যাক্তি জানান অভিমান, রাগ-অনুরাগ, ক্ষোভ, সম্মান, মর্যাদা ও আত্মসম্মান এসব বিষয় নির্বাচনে বড় ফাক্টর হতে পারে। অনেকেই প্রার্থীদের কাছ খেকে ইতিপূর্বে পাওয়া সম্মান ও অসম্মানকে গুরুত্ব হিসেবে দেখছেন। সরকার দলীয় অনেকেই দলীয় বরাদ্দ পাওয়া না পাওয়ার হিসেব করছেন। তবে কিছু সরকার দলীয় নেতাকর্মী প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে কাজ করলেও গোপনে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। অন্যদিকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সহিদুজ্জামান শাহ বিএনপির প্রার্থী হয়ে উপজেলা নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করায় তার উপর বিএনপির অনেক নেতাকর্মী ও ভোটার নাখোশ হয়ে আছে। আবার আওয়ামীলীগের অনেকেই তাকে সহজে মেনে না নেয়ায় কিছু নেতাকর্মী তার উপর বিরক্ত। গণ্যমান্য ব্যাক্তিগণ জানান, যেকোন প্রার্থীকেই নেতা ও ভোটারদের মান-অভিমান ঘোচাতে ব্যাপক ঘাম ঝরাতে হবে।
রিটার্নিং অফিসার ও জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান প্রামাণিক বলেন, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে ইতিমধ্যে নির্বাচনের সবধরনের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। আশা করি, সবার সহযোগিতায় একটা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হাতেম ইন্তেকাল করলে এ আসনটি শুন্য হয়।