আগামী ৭ থেকে ১২ আগষ্ট পর্যন্ত সারা দেশের ন্যায় দিনাজপুরে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন কর্মসূচী পালন করা হবে। এ সময়ে জেলার ১৩টি উপজেলায় ও ৫টি পৌরসভার ১৫১টি টিকাদান কেন্দ্রে মোট ২ লাখ ১৪ হাজার ২০০ জনকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন (করোনা টিকা) প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে। এই কর্মসূচী বাস্তবায়নে টিকাদান কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকসহ ৯ শতাধিক কর্মীবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ভ্যকসিন প্রদান করা হবে। পাশাপাশি এইএফআই ম্যানেজমেন্ট ভ্রাম্যমান মেডিকেল টিম ও সুপারভাইজাররা প্রতিটি ইউনিয়নের এসব কর্মীবাহিনীকে সার্বক্ষনিক তদারকি করবে।
বুধবার (৪ আগষ্ট) সকালে নিজ কার্যালয়ে দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আব্দুল কুদ্দুছ এসব তথ্য জানান। তিনি জানান,
দিনাজপুর জেলায় ১০৩টি ইউনিয়নে ও প্রথম পর্যায়ে ৫টি পৌরসভায় এই ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন কর্মসূচী পালন করা হবে। ১০৩টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে ৩টি বুথ স্থাপন করা হবে। প্রতি বুথে ২০০ জন করে প্রতিদিন ৬০০ জনকে টিকা প্রদান করা হবে। সপ্তাহে ৩ দিনে ১৮০০ জন মানুষকে টিকা প্রদান করা হবে। সে হিসেবে প্রতিটি ইউনিয়নে প্রতিদিন ৬১২০০ জনকে ও তিন দিনে সবমোট ১ লাখ ৮৫ হাজার ৪০০ জন মানুষকে টিকা প্রদান করা হবে।
জেলার ৯টি পৌরসভার মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৫টি পৌরসভায় টিকাদান কর্মসূচী পালন করা হবে। একই নিয়মে ৫টি পৌরসভার ৪৮টি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ৯৬০০ জন হিসেবে তিনদিনে ২৮৮০০ জন মানুষকে টিকা প্রদান করা হবে। ৫টি পৌরসভার মধ্যে দিনাজপুর পৌরসভায় ১২টি ওয়ার্ড ও আর ফুলবাড়ী, বিরামপুর, পার্বতীপুর ও বোচাগঞ্জ এই ৪টি পৌরসভার ৩৬টি ওয়ার্ড মিলে ৪৮টি ওয়ার্ডে ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন কর্মসূচী পালন করা হবে। দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলার ১০৩টি কেন্দ্র ও প্রথম পর্যায়ে ৫টি পৌরসভার ৪৮টি কেন্দ্রসহ সর্বমোট ১৫১টি কেন্দ্রে সর্বমোট ২ লাখ ১৪ হাজার ২০০ জনকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন (করোনা টিকা) প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হবে।
সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আব্দুল কুদ্দুছ জানান, প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে প্রথম সারির সুপারভাইজার ও এইএফআই ম্যানেজমেন্ট ভ্রাম্যমান মেডিকেল টিম টিকাদান কর্মসূচী ও কর্মবাহিনীকে তদারকি করবে।
সিভিল সার্জন জানান, যাদের বয়স ১৮ বছর বা উর্ধে তাদেরকে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নির্ধারিত টিকা কেন্দ্রে এসে ভ্যাকসিন নিতে হবে। প্রথম ২ ঘন্টা নারী ও ৫০ বছরের উর্ধে সকল পুরুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। যারা ইতোমধ্যে অনলঅইনে নিবন্ধন করেছেন তাদেরকে নিবন্ধনের সময় উল্লেখিত টিকা কেন্দ্রে এসে ভ্যাকসিন নিতে হবে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর ৩০ মিনিট টিকা কেন্দ্রে অপেক্ষা করতে হবে এবং ভ্যাকসিন নেওয়ার পর যেকোন রকম শারীরিক সমস্যা/অসুবিধা হলে সাথে সাথে টিকাদান কর্মীকে খবর দিতে হবে। প্রয়োজনে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে। তিনি জানান, টিকা নেওয়ার পরেও জরুরী কাজে ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। একে অপর হতে অন্ততপক্ষে ৩ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সাবান ও পানি দিয়ে ঘন ঘন ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে। হাঁসি-কাশির সময় হাত/রুমাল দিয়ে নাকমুখ ঢেকে নিতে হবে।
উল্লেখ্য, দিনাজপুর জেলায় ৪ আগষ্ট বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত করোনা টিকার প্রথম ডোজ (অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকা (কোভিশিল্ড) গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ১১ হাজার ৬৯৭ জন ও দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৭৮ হাজার ৮৩০ জন। আর সিনোফার্ম (ভেরোসেল) টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন ৮৪ হাজার ৪৬ জন ও দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ১৪৭২ জন।
এদিকে দিনাজপুর সিভিল জানান, ৪ আগষ্ট বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলায় ১২৯৮০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ২৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১১৬৬৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরেছেন। বর্তমানে জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগির সংখ্যা রয়েছে ১০৬৯ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২২২ জন। গত ২৪ ঘন্টায় ৪৩৩টিসহ এ পর্যন্ত ৬৭৭৯৯টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ২৫৮টি সহ এ পর্যন্ত ৬৫৩১৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ১৭৫ জনসহ এ পর্যন্ত ৫৫০২৯ জনকে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে এবং গত ২৪ ঘন্টায় ৭২৯ জনসহ এ পর্যন্ত ৪৬৯৮৩ জনকে কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় দেয়া হয়েছে। বর্তমানে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ৯৩৬ জন।
সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আব্দুল কুদ্দুছ আরো জানান, দিনাজপুর জেলায় করোনা রোগির চিকিৎসার জন্য মোট বেড রয়েছে ৪১৫টি। এর মধ্যে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেড ২০০টি, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে ৭৫টি ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহে বেড রয়েছে ১৪০টি।