মোরশেদ-উল-আলম, চিরিরবন্দর প্রতিনিধি ঃ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণায় চলছে দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে পরিচ্ছন্নতার কাজ সরকারি নির্দেশনা মেনে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। উপজেলার ২০২ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭৬ টি মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১২টি কলেজ ও ৩৯ টি মাদ্রাসা খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্দেশনায় রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মচারী সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে হবে।
দীর্ঘ এক বছর সাত মাস বন্ধ থাকায় যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে ঘাস ও শ্রেণিকক্ষে ময়লা-আবর্জনার সৃষ্টি হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানে এখন চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। গত ২ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে বলে জানান উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মনজুরুল হক।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অনেক বিদ্যালয়ের মাঠে ঘাস ও গাছগাছালিতে ভরে গেছে। কিছু শ্রেণিকক্ষে ময়লার স্তূপও দেখা গেছে। প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষক-কর্মচারীরা অতিরিক্ত লোক নিয়ে এসব মাঠ ও শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় দেড় বছর পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার খবরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরাও বই-খাতা, স্কুল ড্রেস নিয়ে ধোয়ামোছা করে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বেলতলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির আরাফাতুন ইতি জানায়, ‘দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার কারণে রুটিন মাফিক পরাশোনা হয়নি। স্কুল খুললে আবার পড়াশোনা ভালো হবে ও খেলাধূলাও হবে। বেলতলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোরশেদ উল আলম জানান, তার বিদ্যালয়ে ৪১৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এসএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছে ৫৬ জন এবং শিক্ষক রয়েছে ১৩ জন। সরকারি নির্দেশনামতে গত ৫ দিন ধরে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। শ্রেণিকক্ষে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য আপাতত ২ হাজার মাস্ক কেনা হয়েছে। প্রতি বেঞ্চে দুজন করে শিক্ষার্থী বসা হবে। এখন সব প্রস্তুতি শেষ। প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, ‘নির্দেশনা মোতাবেক আমরা কাজ করছি। বিশেষ করে পাঠদানের উপযোগী করতে শ্রেণিকক্ষগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে।’ করোনার অতি মহামারির কারণে ও দারিদ্র্যতায় ১০ শতাংশ শিশু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দারিদ্র্যের কারণে অনেক মেয়েকে বাল্যবিয়ে দেওয়া হয়েছে। করোনার কারণে অনেকেই স্কুলে ফিরবে না। তারপরও প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবন, আসবাবপত্র, গবেষণাগার, খেলার মাঠ সবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে।
উপজেলার বেলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নকর্মী হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছি।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মনজুরুল হক জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঠদানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। উপজেলা অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার প্রাণকৃষ্ণ ঘরামী প্রতিদিন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করছেন। শিক্ষালয়গুলোয় পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি সাবান পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আশপাশের ঝোঁপঝাড়ও পরিষ্কার করা হচ্ছে। গতকাল ৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় চিরিরবন্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে পুনরায় সমন্বয় সভা করে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার এমজিএম সারোয়ার হোসেন বলেন, উপজেলার সকল প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মাসিক মিটিংয়ে বিশদ ভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের বরণ করা হবে। সকল ক্লাষ্টার সহকারি শিক্ষা অফিসারদের কঠোর মনিটরিং করতে বলা হয়েছে।