হিলি সংবাদদাতা ॥ সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছাত্র আমির হামজা। সমাজের আর দশজনের মতো হেঁসে খেলে বাঁচতে চায়। বর্তমানে সে মরনব্যাধি ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। এই সুন্দর পৃথিবীর মায়া ছেড়ে কেউ যেতে চায় না। কিন্তু মরনব্যাধি ক্যান্সার রোগ তার বেঁচে থাকার স্বপ্নকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। সে রোগে সে বিছানায় শুয়ে শুয়ে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
আমির হামজার বয়স মাত্র (১৩) বছর। দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার আলিহাট ইউনিয়নের নিভৃত পল্লী ধাওয়া নশীপুর গ্রামে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহন করে। সে পার্শ্ববর্তী কোকতাড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত। তার বাবা আশরাফুল ইসলাম (২৮) কৃষি কাজ করে কোন রকমে সংসার চালায়। মা জেসমিন বেগম একজন গৃহিণী। জন্মের পরে বাবা মা সন্তানের আদর করে নাম রাখেন আমির হামজা। স্বপ্ন দেখেছিলেন ছেলে বড় হয়ে সংসারের দুঃখ কষ্ট দুর করবে। গড়ে উঠবে সুখের সংসার। কিন্তু আদরের সেই ছেলে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ায় বাবা মার সেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে। এখন ছেলেকে বাঁচতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাবা আশরাফুল ইসলাম। চিকিৎসার খরচ বহন করতে হিমশিম খাচ্ছে তার বাবা,মা। এখন ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে চোখের দু ফোটা জ্বল ফেলা ছাড়া কিছুই করার নেই বাবা আশরাফুল ইসলামের।
সরেজমিনে কথা হয় বাবা আশরাফুল ইসলামের সাথে তিনি বলেন, আমার ছেলে আমির হামজার আজ থেকে প্রায় সাত বছর আগে গলায় একটা টিউমার দেখা দেয়। পরে রাজশাহীতে একটি বে-সরকারি ক্লিনিকে অপারেশন করে চিকিৎসা করা হয়। দুই বছর সে খুব ভালো ছিলো। তারপরে হঠাৎ করে আবারও সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ছেলের চিকিৎসার জন্য প্রথমে নিয়ে যাই দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তার চিকিৎসা করি। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আমার ছেলের গলায় আক্রান্ত স্থানের মাংস কেটে পরীক্ষা নিরিক্ষার পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ছেলেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান চিকিৎসা করা অবস্থায় গত প্রায় ছয় মাস আগে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক ছেলের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরিক্ষা শেষে তার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা। নিরুপায় হয়ে ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে এসেছি। এখন বর্তমানে পার্শ্ববর্তী ঘোড়াঘাট উপজেলার ওসমানপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে সপ্তাহে দুই থেকে তিন ব্যাগ রক্ত দিয়ে আবার বাড়িতে নিয়ে আসি। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত দিচ্ছি, স্যালাইন ও বিভিন্ন ঔষধ চলছে। দীর্ঘ দিন থেকে ছেলের চিকিৎসার খরচ বহন করায় এখন আমার পক্ষে চিকিৎসার খরচ বহন করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। আমার যেটুকু সম্বল ছিলো ছেলের চিকিৎসার কাজে খরচ করে আমি এখন নিঃশ্ব হয়ে গেছি। এমন অবস্থায় চিকিৎসার জন্য সরকারি সহযোগিতার আশায় স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও এর নিকট আকুল আবেদন করছি। সেই সাথে সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের নিকট আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য সহযোগিতার আবেদন করছি।
আমির হামজাকে সমাজের কোন স্বহৃদয়বান ব্যক্তি সাহায্যে পাঠাইতে চাইলে এই ঠিকানায় যোগাযোগ করে পাঠাইতে পারবেন। ০১৩১৮-১০০৪৭০(বিকাশ ও নগদ) নাম্বার।
হাকিমপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ হারুন বলেন, আশরাফুল ইসলামকে আমি চিনি। কিন্তু তার ছেলে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত এটি আপনার মাধ্যমে প্রথম জানলাম। আমি ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত শিশু আমির হামজার বিষয়টা ভালো ভাবে খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো। তবে উপজেলা পরিষদে শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারি সহযোগিতার জন্য কোন আবেদন করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন,উপজেলা সমাজসেবা অফিসের নির্ধারিত ফরমে সরকারি অনুদানের জন্য আবেদন করলে তার চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত ক্যান্সার রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।