দক্ষিন এশিয়ার সর্ববৃহৎ পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করতে দিনাজপুরে আগত মুসল্লি, বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অবস্থানরত ও বিভিন্ন ক্লিনিকে অসুস্থ্য রোগীর স্বজনদের ঈদে মানবতার মেহমানদারি করেছে দিনাজপুর রোলেক্স বিরিয়ানী হাউস।
৩ মে’২২ মঙ্গলবার ঈদের দিনে এই মেহমানদারির উদ্বোধন করেন দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল। এসময় দিনাজপুর রোলেক্স বিরিয়ানী হাউসের স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ সফিউল্লাহ খান শুক্লা, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক মনিরুজ্জামান জুয়েল, সাংবাদিক শাহরিয়ার হিরু, ইউসুফ আলী, নুর ইসলাম, মিজানুর রহমান মিজান, কাহারোল উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আসিফ রেজা রুবেল উপস্থিত ছিলেন।
দিনাজপুরের সকল হোটেল-রেস্তোঁরা বন্ধ থাকায় আগত মুসল্লি, আবাসিক হোটেলে অবস্থানরত ও বিভিন্ন ক্লিনিকের রোগীর স্বজনরা যে কোন প্রকার ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন রোলেক্স বিরিয়ানী হাউস এ উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সকল মেহমানকে তেহারী, সেমাই ও জুস খাওয়ানো হয়। চট্টগ্রাম, যশোর, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নড়াইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঈদের নামাজ পড়তে আসা সকল মেহমানদের নিয়ে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠে। বগুড়া জেলার জলেস্বরীর রহমান (৬০), নীলফামারীর মোঃ আব্দুস সাত্তার, সৌদি প্রবাসি জহুরুল ইসলাম, যশোরের ইঞ্জিঃ সাবেদ আলী, সিরাজগঞ্জের আব্দুর রাজ্জাকসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মুসল্লিরা বলেন, অর্থ আছে কিন্তু কোন হোটেল রেস্তোঁরা খোলা নেই। আত্মীয়-স্বজন নেই। চিন্তা ছিল নামাজ শেষে খাবো কোথায়। কিন্তু এ চিন্তা আমাদের দূর করেছে রোলেক্স বিরিয়ানী হাউস। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় খাওয়া শেষে বিল দিতে গেলে বলা হয়, আজকে বিক্রি নয়। ঈদের মেহমানদারী জন্য কোন পয়সা নেওয়া হচ্ছে না। এছাড়াও বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অবস্থানরতদের মধ্যে টাঙ্গাইলের মোঃ ফিরোজ রেজা জানান, বৃহৎ ঈদের জামাতে নামাজ আদায় করার জন্য স্ত্রী বর্ণাকে নিয়ে দিনাজপুরে এসেছিলাম। উঠেছি আবাসিক হোটেলে। নামাজ আদায় শেষে মেহমানদারী করলাম এক অজানা মানুষের হোটেলে। এ স্মৃতি চিরদিন মনে থাকবে। দিনাজপুর ইসলামিক হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার সাঈদ আলম বলেন, দিনাজপুরে প্রায় ৬০-৬৫টি ক্লিনিক রয়েছে। প্রত্যেক ক্লিনিকে রোগীদের সাথে স্বজন রয়েছে। ঈদের দিন হোটেল রোস্তোঁরা বন্ধ থাকায় স্বজনরা চরম বিপাকের মধ্যে পড়েছে। এই চিন্তা দূর করেছে এই রেস্তোঁরাটি। রোগীর স্বজনরা মেহমানদারী করার পর রোগীদের জন্য খাবার নিয়ে আসছে। তিনি বলেন, এই উদ্যোগটি আমার বিবেককে নাড়া দিয়েছে। পৃথিবীতে এখনও এমন মানুষ রয়েছে আজ তা ভাবতে হচ্ছে। তাই পৃথিবী ধ্বংস হচ্ছে না। ঈদে মেহমানদারীর এই উদ্যোগকে মানবতার মেহমানদারী বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।
দিনাজপুর রোলেক্স বেকারীর স্বত্তা¡ধিকারী মোঃ শফিউল্লাহ খান শুক্লা বলেন, এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত দিনাজপুরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিভিন্ন জেলা থেকে মুসল্লিরা এই জামাতে অংশগ্রহণ করছে। বাড়িতে যেতে পারেনি এমন মানুষ আবাসিক হোটেলে রয়েছে ও মুমুর্ষ রোগীদের নিয়ে স্বজনরা ক্লিনিকে অবস্থান করছে কিন্তু অর্থ আছে কোন হোটেল রেস্তেঁরা খোলা নেই। এসব মানুষ চরম বিপাকের মধ্যে পড়বে। কোন মানুষই যেন বিপাকে না পড়ে এই চিন্তা-চেতনা থেকেই আমার এই উদ্যোগ। আমার আহবান থাকবে অন্যান্য হোটেল রোস্তাঁরার মালিকরা এক দিনের জন্য এ উদ্যোগ গ্রহণ করলে কোন মানুষ বিপাকে পড়বে না। কেউ ঈদের আনন্দ উৎসব থেকে বঞ্চিত হবে না। ঘরের বাইরে থেকেও আনন্দ উৎসবে সামিল হওয়ার জন্যই এ উদ্যোগ।