দিনাজপুরে অধিগ্রহণকৃত অব্যবহৃত জমি মূল মালিকগণের ওয়ারিশদের নিকট বরাদ্দ দেয়ার দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে ক্ষতিগস্থ পরিবারের সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) সকাল ১১টায় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ দিনাজপুর ডিভিশন কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসুচী পালন শেষে তারা দিনাজপুর জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর ও দিনাজপুর জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, দিনাজপুর জেলার কোতয়ালী থানার উত্তর ফরিদপুর মৌজার জে এল নং-৯৬ এলএ কেস নং-১৯/চার/১৯৬০-৬১ আওতায় আমাদের পিতা ও দাদার নামীয় সম্পত্তি তৎকালিন পাকিস্তান সরকার ১৯৬০-৬১ সালে হাউজিং এষ্টেটের আওতায় রিফিউজিদের পূর্নবাসনের উদ্দেশ্যে জোরপূর্বক ১৯৪৮ সালের জরুরী হুকুম দখল আইনে হুকুম দখল করে। উক্ত সময়ে হাউজিং এষ্টেট আমাদের পৈত্রিক বসতবাড়ী বাদ দিয়ে রিফিউজিদের পূর্নবাসনের জন্য কোয়ার্টার নির্মাণ করে। পরবর্তিতে আমরা জানতে পারি আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি ও একই সাথে বসতবাড়ীর জমিও হুকুম দখল করেছে। আমরা পৈত্রিক বসতবাড়ীর জায়গাগুলো অবমুক্ত (ডি-রিকুইজশন) করার জন্য বহুবার আবেদন করি। তৎপ্রেক্ষিতে হাউজিং এষ্টেট কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সরকার সরেজমিন তদন্ত করে ক্ষতিগ্রস্থ চারটি পরিবারকে তাদের অধিগ্রহণকৃত অব্যবহৃত বসতবাড়ীর জায়গা অবমুক্ত করার সুপারিশ করে এবং বাকী ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারবর্গকে পর্যায়ক্রমে অবমুক্ত (ডি-রিকুইজশন) করা হবে মর্মে আশ^স্ত প্রদান করে। কিন্তু পররর্তিতে তা আর অবমুক্ত (ডি-রিকুইজশন) হয়নি।
স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, পরবর্তিতে হাউজিং এষ্টেট উত্তর ফরিদপুর মৌজার জে এল নং-৯৬ এর আওতায় উপশহর ব্লক নং-৪ এ বসবাসকারী ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারবর্গের জায়গাগুলো যথাক্রমে-১৩টি প্লট, একইভাবে উপশহর ব্লক নং-৫ এ ১৯টি ১৯টি প্লট এবং উপশহর ব্লক নং৬/এ (নতুন) এর বসবাসকারী ২টি প্লটসহ মোট ৩৪টি প্লটে রুপান্তর করে। সেখানে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের ওয়ারিশগন অদ্যাবধি বসবাস করছে।
১৯৪৮ সালের জরুরী হুকুম দখল আইনে বসতবাড়ীর জমি অধিগ্রহণ করলেও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য কোন পূণর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি। অধিগ্রহণের পর হতে অদ্যাবধি উক্ত জায়গার উপর হাউজিং এষ্টেট কর্তৃপক্ষের কোন উন্নয়নমূলক কাজও করা হয়নি। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারবর্গের ওয়ারিশগণ উপরোক্ত প্লটগুলোর উপর অধিগ্রহণের পূর্বকাল হতে অদ্যাবধি নিজ খরচে আধা-পাকা আধা-কাঁচা ঘর তৈরী করে বসবাস করে আসছে এবং নিয়মিত পৌরসভার হোল্ডিং কর ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় একই প্লটে ওয়ারিশগ্রণের একাধিক ব্যক্তি বসবাস করে আসছে।
স্মারকলিপিতে উপরোক্ত বিষয়গুলো মানবিক দৃষ্টিতে বিবেচনা পূর্বক ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারবর্গের নামে প্লট বরাদ্দ দেয়ার দাবী জানানো হয়।
এদিকে মানববন্ধনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারবর্গের কয়েকজন সদস্য জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে যেখানে প্রধানমন্ত্রী গৃহহীন পরিবারের সদস্যদের মধ্যে জমিসহ বাড়ী বরাদ্দ দিয়েছেন, সেখানে দিনাজপুর জাতীয় গ্রহায়ন কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের অধিগ্রহণকৃত অব্যবহৃত জমি ডি-রিকুইজিশন বা প্লট বরাদ্দ না দিয়ে লটারীর মাধ্যমে উক্ত জমির প্লটগুলো অন্যদের মধ্যে বরাদ্দ দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। তারা এই ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে।
মানবববন্ধনে ও স্মারকলিপি প্রদানের সময় মোঃ ইউনুস আলী, আব্দুল মালেক, মোঃ শাহাদৎ হোসেন, সোহরাব আলী, মোঃ গুলশান আলী, মোঃ সাদেক হোসেন, মোঃ জাহিদুল ইসলাম জুয়েল, জামিল বাবু, শরিফুল ইসলাম, মোঃ বাদশা হাসান, মোঃ শওকত আলী, কবিরুল ইসলাম বাবুসহ শতাধিক ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের চার শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু উপস্থিত ছিলেন।
২৫নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ দিনাজপুর ডিভিশন কার্যালয়ের সামনে দিনাজপুরে অধিগ্রহণকৃত অব্যবহৃত জমি মূল মালিকগণের ওয়ারিশদের নিকট বরাদ্দ দেয়ার দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে ক্ষতিগস্থ পরিবারের সদস্যরা।