স্টাফ রিপোর্টার ॥
বাজারে নবান্নে উঠেছে আগাম জাতের নতুন আলু। তবে দাম ২০০ টাকা কেজি। শুনতে যেমন অবাক তেমনি অবিশ্বাস্যও বটে। তবে এই দামেই দিনাজপুরের বাজারে বিক্রি হচ্ছে নতুন আলু।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) দিনাজপুরের বাহাদুর বাজারে এই আগাম জাতের আলু ওঠে। তবে পরিমাণে ছিল খুবই কম। মাত্র ২০ কেজি নতুন আলু নিয়ে বাজারে বসেছিলেন দুই ব্যবসায়ী। মোঃ একরামুল হক ও মোঃ রুবেল আলী নামের দুজন খুচরা সবজি বিক্রেতা এই আল বিক্রি করেছেন।
এর মধ্যে মোঃ একরামুল হক ১০ কেজি ও মোঃ রুবেল আলী ১০ কেজি আলু বিক্রি করেছেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই আলু বিক্রি করেন তারা। পরিমাণে কম করে হলেও নতুন জাতের আলু কিনেছেন ক্রেতারা। কেউ কিনেছেন ১০০, কেউ ২০০ বা ২৫০ ।
ক্রেতা ও বিক্রেতারা জানিয়েছেন, নতুন সবজির পাশাপাশি নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করেই নতুন আলুর দাম এত চড়া। আকাশচুম্বী দাম হলেও ক্রেতারা এই দামে কিংবা এর আশপাশের দামেই কিনেছেন এই আলু। নতুন আলু কিনতে ক্রেতাদেরও আগ্রহ ছিল বেশ।
২০০ টাকা আলুর কেজি বিষয়টি জানতে পেরে দুপুরে যান এই প্রতিবেদক বাহাদুর বাজারে। সেখানে গিয়ে দেখেন, দুজন ক্রেতা আলু ক্রয় কিনছেন। দুজনই কিনেছেন ২৫০ গ্রাম করে। যার দাম পড়েছে ৫০ টাকা। অর্থাৎ ২০০ টাকা কেজি।
তবে বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সকালে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করতে পারলেও বিকেলে বিক্রি করেছেন ১৪০ টাকা। কারণ এই জালা (অপরিপক্ক)আলুর দাম আগামীকাল থাকবে না।
জানা গেছে, বাংলা দিনপঞ্জিকা অনুযায়ী পহেলা অগ্রহায়ণকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নবান্ন উৎসব হিসেবে পালন করেন। এই নবান্ন উৎসবে নতুন ধানের ভাত ও পায়েসের পাশাপাশি শাক-সবজি ও তরি-তরকারিও হয় নতুন ফসল দিয়ে। এখনও নতুন আলু বাজারে ওঠেনি। এই আলু ওঠতে আরও অপেক্ষা করতে হবে ২০-২৫ দিনের মতো। কিন্তু এরই মধ্যে নবান্ন উৎসব। তাই এই নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে ২০ কেজি আলু নিয়ে বসেছিলেন দুই খুচরা ব্যবসায়ীরা। আর সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে বেশি দামে এই আলু কিনেছেন।
বাহাদুর বাজারে বাজার করতে আসা প্রদীপ দাস বলেন,আজ শুক্রবার আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নবান্ন পালন করছেন। এই নবান্নে সবকিছুই নতুন লাগে। চাল নতুন, শাক-সবজি সবকিছুই নতুন। এইসব নতুন দিয়েই পালন করা হয় নবান্ন। নতুন সবজি হিসেবে আলু বাজারে উঠেছে। তাই বিক্রেতারা ২০০ টাকা কেজি দামে আলু বিক্রি করছেন। যেহেতু বাজারে নতুন আলু নেই তাই এই দামে বাধ্য হয়েই কিনতে হয়েছে।
রাজবাড়ী এলাকার লক্ষণ সরকার বলেন, নবান্ন উপলক্ষে নতুন সবজি লাগে। তাই তিনি ৫০ টাকায় আধাকেজি (৫০০) গ্রাম আলু কিনেছেন। গত বছর অবশ্য ২৫০ গ্রাম আলু কিনেছিলেন ৮০ টাকায়। এবার দাম কিছুটা কম।
ক্রেতা সজিব অধিকারি বলেন, ২০০ টাকা আলুর কেজি। কয়েকদিন ধরেই নতুন আলু খুঁজছি বাজারে। আজকে আলু বাজারে উঠেছে কিন্তু এত দামে তো ক্রয় করার ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই ২০ টাকা দিয়ে ১০০ গ্রাম আলু কিনেছি।
আলু মোঃ একরামুল হক বলেন, আমি বৃহস্পতিবার এই আলু কিনেছি খানসামা পাকেরহাট এলাকার এক পাইকারের কাছ থেকে। নবান্নের সময় আলুর দাম বেশি থাকে। এই আলু কিনেছি বেশি দামে। নতুন আলু তো বাজারে একেবারেই কম। নতুন আলু এখনও ওঠেনি। তাই একটু বেশি দাম।
আরেক বিক্রেতা মোঃ রুবেল আলী বলেন, সকালে আমি বাহাদুরবাজার থেকে পাইকারি হিসেবে ১০ কেজি আলু কিনেছি ১৬০ টাকা কেজি দরে। আমি সকালে বিক্রি করেছি ২০০কেজি হিসেবে। বিকেলে বিক্রি করলাম ১৪০ টাকা কেজি দরে। নবান্নে নাকি নতুন সবজি ভগবানকে দিতে হয়, তাই ক্রেতারা নিয়েছে কেউ ১০০ গ্রাম, কেউ ২০০-২৫০ গ্রাম আবার কেউ ৫০০ গ্রাম।