নৌ-পথে অবৈধভাবে দাঁপিয়ে বেড়াছে প্রায় ১ হাজার স্পিডবোট। অধিকাংশ স্পিডবোটের নিবন্ধন নেই। বাড়তি টাকা নিয়ে এসব ঝুঁকিপূর্ণ স্পিডবোট ধারণক্ষমতার অধিক যাত্রী নৌ-পথে পারাপার করছে। নৌদুর্ঘটনা রোধে নানা রকম উদ্যোগের কথা বলা হলেও যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে না।
প্রতিবছরই দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। গত ২২ বছরে প্রায় সাত শতাধিক ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাণহানি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুর। প্রতিটি ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়। বেশির ভাগ রিপোর্ট আলোর মুখ দেখে না। কিছু কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হলেও সুপারিশ বাস্তবায়ন হয় না। দেখা গেছে, নৌদুর্ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে, তদন্ত করছে। কিন্তু ফল শূন্য। নৌদুর্ঘটনা থামছে না। আবার ছোট ছোট দুর্ঘটনাগুলো কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি বলেই বড় দুর্ঘটনা ঘটে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত বছরের ২০ জুন এমভি ময়ুর-২-এর আঘাতে রানিং বার্ড সদরঘাটে ডুবে যায়। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি হলেও গত দশ মাসে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি সম্প্রতি শীতলক্ষ্যায় লঞ্চ দুর্ঘটনায় ৩৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট লালফিতায় বন্দি। এই দুর্ঘটনার রেশ না কাটতেই গত সোমবার পদ্মানদীতে বাল্কহেডের সঙ্গে স্পিডবোটের ধাক্কায় ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটে।
এই স্পিডবোটের নিবন্ধন বা রুট পারমিট ছিল না। লকডাউনে স্পিডবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই এটি যাত্রী বহন করে। যে বালুবাহী (বাল্কহেড) জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগেছে, তার নাম এমভি সাফিন সায়হাম। এ জাহাজটিরও নিবন্ধন নেই। নিবন্ধন ছাড়াই বিআইডব্লিউটিএ, নৌপরিবহন অধিদপ্তর, নৌপুলিশ ও কোস্ট গার্ড এবং স্থানীয় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব নৌযান চলাচল করছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালীদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই চলে অবৈধ এসব নৌযান।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল অধ্যাদেশ-১৯৭৬’ অনুযায়ী নিবন্ধন ও রুট পারমিট ছাড়া স্পিডবোট চলাচলে আইনগত সুযোগ নেই। এটি অপরাধ। অথচ বেশির ভাগ স্পিডবোট এগুলো ছাড়াই বিআইডব্লিউটি-এর ঘাট ব্যবহার করছে। ঐ সব ঘাট ইজারা দিয়ে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করছে সংস্থাটি। যদিও বন্দর এলাকা থেকে অনিবন্ধিত নৌযান চলাচল বন্ধে বিআইডব্লিউটিএ-কে চিঠি দিয়ে আসছে নৌপরিবহন অধিদপ্তর। সারা দেশে রুট পারমিট আছে মাত্র ২০টি স্পিডবোটের। অথচ নৌ-পথে অবৈধভাবে প্রায় ১ হাজারের মতো স্পিডবোট দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর এ জেড এম জালাল বলেন, এসব নৌযানের নিবন্ধন নেই। আইন মান্য করে চলে না। আইনের ব্যত্যয় করে চলে। যারা এই ধরনের অন্যায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
বর্তমানে মাত্র সাতটি রুটে ২০টি স্পিডবোট রুট পারমিট নিয়ে চলাচল করছে। সেগুলো হচ্ছে :পটুয়াখালীর পানপট্টি থেকে বোড়ালিয়া ১০টি, বরগুনার কুড়াকাটা থেকে আমতলী দুটি, লাহারহাট-ভেদুরিয়া একটি, হাজিরহাট-ঘোষেরহাটে দুটি, চরমোনতাজ-গৈনখালী রুটে চারটি ও গৈনখালী-চরমন্ডল রুটে একটি। এর বাইরে মাওয়ায় কমবেশি ২০০, পাটুরিয়ায় প্রায় অর্ধশত, নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই শতাধিক স্পিডবোট নিয়ম লঙ্ঘন করে চলছে। এছাড়া বরিশাল, ভোলা, হাওড়াঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় রুট পারমিট ছাড়া স্পিডবোট চলাচল করছে।
নৌপথ বিশেষজ্ঞ বলছেন, কমিটির রিপোর্ট বাস্তবায়ন হয় না বলে দুর্ঘটনাও বন্ধ হচ্ছে না। দুর্ঘটনা ঘটার পর চালককে শাস্তি দিলেই শেষ হয়ে যায় না। এটাকে ফলোআপ করার জন্য মনিটরিং গ্রুপ গঠন করলে এ দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
আমাদের ফেইসবুক Link : ট্রাস্ট নিউজ ২৪