ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলায় পরকীয়া প্রেমিকের প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের হাতে স্বামীকে হত্যা করেছেন স্ত্রী হাফিজা বেগম (৪৫)। সঙ্গে ছিল তার ও পরকীয়া প্রেমিকের সন্তান। ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়নের চরকান্দা গ্রামে।
এ ঘটনায় বুধবার রাতে প্রেমিক ভুলু মোল্লা ও প্রেমিকা হাফিজা বেগমসহ ৪ জনকে আটক করে বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলহাজতে প্রেরণ করছে পুলিশ।
আটককৃতরা হলো- চরকান্দা গ্রামের প্রেমিক আতিয়ার রহমান ভুলু (৫৫), তার পুত্র সম্রাট মোল্লা (৩০), প্রেমিকা হাফিজা বেগম (৪৫) ও তার পুত্র হোসাইন (২২)। সেকেন্দারকে হত্যার কথা আসামিরা স্বীকার করে বৃহস্পতিবার ৩নং আমলি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ আকরামের আদালতে ১৪৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবুল কালাম আজাদ জানান, আলগী ইউনিয়নের চরকান্দা গ্রামের গৃহবধূ হাফিজার বেগমের সঙ্গে একই গ্রামের আতিয়ার রহমান ভুলু মোল্লার পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে। আস্তে আস্তে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়।
এ পরকীয়া প্রেম, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও প্রেমিক ভুলুর প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে প্রেমিকার স্বামী সেকেন্দার আলীকে (৫৫) হত্যা করার পরিকল্পনা করে। গত বছরের ২৫ অক্টোবর রাতে স্ত্রী হাফিজা বেগম তার স্বামী সেকেন্দারকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে। পরে প্রেমিক-প্রেমিকাসহ ২ জনের সন্তানদের সহায়তায় সেকেন্দারকে হত্যা করে রাগদার বিলে কচুরিপানার নিচে ফেলে দেয়।
এ ঘটনাকে আড়াল করতে পরদিন হাফিজা তার স্বামী নিখোঁজ মর্মে ভাঙ্গা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ওই বছরের ২৭ অক্টোবর সকালে রাগদার বিলে মাছ ধরতে গিয়ে দেলোয়ার নামে এক জেলে একটি লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে হাফিজাকে সংবাদ দিলে হাফিজা নিখোঁজ হওয়া স্বামীর লাশ শনাক্ত করে।
রাতে প্রেমিক ভুলুর পরামর্শে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ভাসুর খোকন মোল্লা ও খলিল মোল্লাসহ আরও অজ্ঞাত কয়েক জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। দীর্ঘদিন তদন্তের পর ভাঙ্গা থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়।
তদন্তে দেখা যায়, প্রেমিক আতিয়ার রহমান ভুলু মোল্লার পরামর্শে প্রেমিকা হাফিজা তার স্বামী সেকেন্দারকে হত্যা করে। এরপর লাশ গুম করার সহায়তা করে প্রেমিক-প্রেমিকার ২ পুত্র সম্রাট ও হোসাইন। পরে পুলিশ ঘাতক ৪ জনকে আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও বলেন, চাঞ্চল্যকর সেকেন্দার আলী হত্যা মামলার বাদী এখন আসামি, স্ত্রী হত্যা করল স্বামীকে, সন্তান খুন করল বাবাকে, বাপ-বেটা মিলে খুন করল প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে।
ভাঙ্গা থানার ওসি মো. লুৎফর রহমান জানান, চাঞ্চল্যকর সেকেন্দার আলী হত্যার ঘটনায় মামলা হওয়ার পর আমি আমার চৌকস দারোগা আজাদকে তদন্ত করার নির্দেশ দেই। দীর্ঘ ৮ মাস তদন্তের পর আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সব আসামি হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
আমাদের ফেইসবুক Link : ট্রাস্ট নিউজ ২৪