মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী:
রাজশাহী জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস যেন দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছে। এখানে অনিয়মই যেন নিয়ম হয়ে গেছে। সরকারি এই অফিসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সহায়ক কর্মীরা জড়িত নিয়মবহির্ভূত কাজে, এবং চলছে অবৈধ লেনদেনও। এর ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে, পাশাপাশি সরকারও হারাচ্ছে বড় অংকের রাজস্ব।
সরাসরি পরিদর্শন ও ভুক্তভোগীদের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, দুই হাজার সাত সালে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে একটি মাঠ জরিপ অনুষ্ঠিত হয়। সেই জরিপে যেসব জমি রেকর্ড করা হয়, সেসব জমির মালিকদের ভূমি সংক্রান্ত সার্টিফাইড কপি প্রদান শুরু হয় চলতি বছরের সতেরোই জুলাই। আইন অনুযায়ী, বিভিন্ন এলাকায় ত্রিশ কর্মদিবসের মধ্যে এটি পৌঁছানোর কথা থাকলেও, বিতরণ কার্যক্রম চলে এই বছরের ছাব্বিশে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
শুধু তাই নয়, সরকার নির্ধারিত ফি দিয়েও সেবা মিলছে না। খতিয়ান ও মাঠ খসড়ার জন্য সরকারি ফি একশ টাকা হলেও, সেটি সংগ্রহ করতে দুইশ থেকে পাঁচশ টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। নির্দিষ্ট মৌজার নকশার জন্য সরকার নির্ধারিত পাঁচশ টাকার বদলে জমির মালিকদের সাতশ থেকে এক হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। তবুও তারা আসল কাগজের কপি পাচ্ছেন না। অনেক ভুক্তভোগী দূরদূরান্ত থেকে রাজশাহীতে এসে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
সরকার নির্ধারিত ফি’র সাথে অতিরিক্ত টাকা দিয়েও তারা জমির কাগজের স্ক্যান কপি পাচ্ছেন। অফিস থেকে সরবরাহকৃত কাগজগুলোকে আসল কাগজের স্ক্যান কপি বলেই দাবি করছেন ভুক্তভোগীরা। আবার কেউ আসল কাগজ চাইলে অফিস কর্তৃপক্ষ জানায়, কাগজ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে পুনর্মূল্যায়নের জন্য। জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের সাইফুল ইসলাম, আঃ ওহাব, সার্ভেয়ার আবুল কাশেম, সৈয়দ আলী এবং সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার আবু সাঈদ যৌথভাবে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
ভুক্তভোগী চাঁপাইনবাবগঞ্জের দেবীনগর মৌজার কৃষক মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, “আমরা খতিয়ান নিতে এসেছি, কিন্তু তারা বারবার হয়রানি করছে। সরকারি ফি একশ টাকার স্থলে দুইশ, চারশ, পাঁচশ, সাতশ, আটশ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। কিন্তু এখন বলছে আমাদের মৌজার কাগজ ঢাকায় গেছে।”
খতিয়ান নিতে আসা আব্দুর রহমান বলেন, “জুলাই থেকে বিতরণ শুরু হয়েছে। শুরুতে দুইশ টাকা নিয়েছে, এখন পাঁচশ বা সাতশ টাকা নিচ্ছে। সাহেব নেই, নথি ঢাকায় গেছে। ভোগান্তির যেন শেষ নেই।”
মাঠ খসড়া নিতে আসা দেবীনগরের বাবলু বলেন, “আমার একটা সালিশ আছে। দুই থেকে তিন দিন আগে একবার এসেছিলাম, কিন্তু তারা বলছে মাঠ খসড়া নেই, ঢাকায় চলে গেছে। কবে আসবে জানে না।”
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমি শুধু সহযোগী হিসেবে কাজ করেছি। যে কয়দিন কাজ করেছি, সরকারি রেট একশ ও পাঁচশ টাকা নিয়েছি। কেউ অতিরিক্ত টাকা দিলেও অভিযোগ করেনি।”
রাজশাহী দিয়ারা অপারেশনের সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মোঃ আতিয়ার রহমান জানান, “এ ধরনের অভিযোগ আগে দায়ের করা হয়েছিল, সেটির তদন্ত ঢাকায় চলছে। কেউ অভিযোগ নিয়ে এলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।”