
শিগগিরই সরকার পতনে যুগপৎ আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বুধবার (৫ জুলাই) রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে অতি শিগগিরই চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এবারের আন্দোলন হবে চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলন। এই আন্দোলন দেশের সব মানুষ সম্পৃক্ত হবে এবং জনগণ তার অধিকার আদায় করে নেবে।
একদফা আন্দোলন ঘোষণার দিনক্ষণ চূড়ান্ত ও কর্মসূচি প্রণয়নে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে বিএনপি। আজ ১২ দলীয় জোট ও পরের দিন গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যেই একদফা ঘোষণা করা হতে পারে। ঢাকায় বড় সমাবেশের মাধ্যমে একমঞ্চ থেকে ঘোষণা করা হবে সরকার পতনের একদফা। তবে কর্মসূচি পালন করা হবে যুগপৎভাবে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে ১১ দলের নেতারা দ্রুত একদফার আন্দোলন ঘোষণা করতে বিএনপিকে তাগাদা দেন। ঘেরাও, রোড মার্চসহ ঢাকামুখী কর্মসূচির প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। কয়েকজন হরতালের প্রস্তাব করলে মির্জা ফখরুল তা নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, হরতালের নেতিবাচক দিক বেশি। সমমনা জোটের নেতারা ঢাকায় বড় সমাবেশ করে একমঞ্চ থেকে একদফার ঘোষণা দেওয়ার ব্যাপারে মত দেন।
বিএনপির সঙ্গে জোটের এই বৈঠকে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ন্যাশনাল পিপলস পার্টির অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার খন্দকার লুৎফুর রহমান, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, পিপলস পার্টির সৈয়দ মাহবুব হোসেন, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদেকী, গণদলের সৈয়দ নজরুল, মুসলিম লীগের নাসির খান, মাইনোরেটি জনতা পার্টির সুকৃতি মন্ডল উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু।
সংবাদ সম্মেলনে এনপিপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, সরকারের পতন ঘটানোর জন্য যা যা করা দরকার আমরা সেটা করব। বিএনপির সঙ্গে একমত হয়েছি, যে কর্মসূচি দেবে, সেই কর্মসূচি আমরা মাঠে থেকে পালন করব।
ইসির ক্ষমতা হ্রাস সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিপন্থি : আরপিও সংশোধন করে ভোট বন্ধে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কমানো সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিপন্থি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ করায়ত্ত করতেই এ সংশোধনী আনা হয়েছে। বুধবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সঙ্গে বৈঠকের পর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনী পাশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা পরিষ্কার সরকার তার ক্ষমতাকে হাতে রাখার জন্য, নির্বাচন ব্যবস্থাটাকে সম্পূর্ণভাবে নিজেদের করায়ত্তে রাখার জন্য সংসদে আরপিওতে সংশোধনী এনেছে। এটি সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিপন্থি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এতদিন ইসি ইচ্ছা করলে একটি এলাকার নির্বাচন বাতিল করতে পারত। এই সংশোধনীর মধ্য দিয়ে এই ব্যবস্থাকে রহিত করে সরকার আবারও প্রমাণ করল তারা জোর করে এবং তাদের মতো করে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চায়। জনগণের ভোটাধিকার হরণ, ভোটের অধিকারকে বঞ্চিত করতে চায়। এই ভোটের অধিকার হরণ করেই সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে।
বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। কক্সবাজার উখিয়ায় হলদিয়া পালং ইউনিয়নের অন্তর্গত মরিচ্যা শ্রাবস্তি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ ধর্ম জ্যোতি ভিক্ষুকে রোববার ভোর রাতে সন্ত্রাসীরা ছুরিকাঘাত করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে যাওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এই বিবৃতি দেন তিনি।
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের আমলে ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে কোনো বাংলাদেশিরই সহায়-সম্পত্তি, জান-মাল নিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচলের কোনো নিশ্চয়তা নেই। দেশ এখন নারকীয় সন্ত্রাসের বৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ। জনসমর্থনহীন সরকারের একমাত্র অবলম্বনই হচ্ছে সহিংস সন্ত্রাসের আশ্রয় গ্রহণ করা। তাদের টিকে থাকার একমাত্র গ্যারান্টি হচ্ছে জনসমাজে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ভয়ের পরিবেশ বজায় রাখা।
আমাদের ফেইসবুক লিংক : ট্রাস্ট নিউজ ২৪