আয়না হলো এমন একটি মসৃণ তল যেখানে যেকোনো আলোর প্রতিফলন হয়ে যেকোনো কিছুর প্রতিবিম্ব দেখা যায়। আয়না এমনই এক বস্তু যা চিরকালই মানুষকে কৌতুহলী করে তুলেছে। যেটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
আয়নাকে ঘিরে রয়েছে নানা রহস্য ,কল্পকাহিনী আর কুসংস্কার। কোথাও এ বস্তু সৌভাগ্যের প্রতীক, কোথাও আবার দুর্ভাগ্যের। আয়না নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে গল্প-গাঁথা ও রহস্যের যেন শেষ নেই। ১৮৩৫ সালে জাস্টিন ভন লাইবিক স্বচ্ছ কাঁচের একপাশে টিন ও পারদের এক ধরনের প্রলেপ দেওয়ার পন্থা আবিষ্কার করেন। পরে সেই থেকে ধীরে ধীরে আয়না সকলের হাতের নাগালে আসতে শুরু করলে আরও বিস্তার হতে থাকে আয়নার প্রচলন।
জানা গেছে, প্রাচীন রোমে ধর্মগুরুরা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বর্ণনা করার জন্যে আয়না ব্যাবহার করতেন। প্রাচীন রোমানদের বিশ্বাস ছিল প্রত্যেক মানুষের সাতবার করে জন্ম থাকে। তাই ঘরের কোনো পুরাতন আয়না কোনো কারণে ভেঙে গেলে আগামী সাত বছর তার দুর্ভাগ্য কাটে না। তবে অন্যদিকে পাকিস্তানে আয়না ভেঙে ফেলাকে দুর্ভাগ্য নয় বরং উল্টো সৌভাগ্যের ইঙ্গিত বলেই মনে করা হতো।
আয়নাকে ঘিরে আরও যেসব রহস্য আছে, সেগুলোর মধ্যে একটি হলো- গ্রিক দেবতা জিউসের অনুসারীরা বাড়িতে কারো মৃত্যু হলে বাড়ির সমস্ত কিছু আয়না ঢেকে রাখতেন। তাদের ধারণা ছিল, মৃতদেহ থেকে পবিত্র আত্মাকে আয়নাবন্দি করে রাখতে পারে আর একবার বন্দি হয়ে গেলে সেই আত্মা কখনো পরলোকে যেতে পারে না।
আয়না নিয়ে আরেকটি যে চমকপ্রদ কল্পকাহিনী আছে, সেটি হলো- যে কেউ আয়না দিয়ে নিজেকে নিজেই হ্যালুসিনেট করতে পারে। একটি মোমবাতি হাতে নিয়ে এমনভাবে ধরে রাখতে হবে যেন মুখের উপর পর্যন্ত আলো পড়ে, তারপর আয়না থেকে এক মিটার ব্যবধানে দাঁড়িয়ে টানা দশ মিনিট তাকিয়ে থাকলেই মানুষ হ্যলুসিনেটেড হতে থাকে।
প্রাচীন চীনে চাঁদের স্বর্গীয় শক্তি ধরে রাখার জন্য আয়না ব্যবহার করা হতো। কথিত আছে, চীনের এক সম্রাট জাদুকরী এক আয়না বসিয়ে সাফল্য পেয়েছিলেন। আজ থেকে প্রায় দুই হাজার বছর আগে, ২৫ খ্রিষ্টাব্দে চীনের সম্রাট কিন শি হুয়াং দাবি করেছিলেন আয়নার দিকে তাকানো মানুষের মুখে তাকিয়ে তিনি তাদের আসল চিন্তা-ভাবনা ও মনের খবর পড়তে পারতেন।
তবে, এতো সব রহস্যের মধ্যেও আয়নার যেটি যথার্থ ব্যবহারের কথা জানা যায় সেটি হলো আয়না তে যে শুধু মানুষের প্রতিবিম্ব দেখা যায় তা নয় বরং এটি শব্দও প্রতিফলিত করতে পারে। এই আয়নাগুলোকে বলা হয় ‘একুইস্টিক মিরর’। যেটি ব্রিটেনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শত্রুপক্ষের বিমানের শব্দ তরঙ্গ নির্ণয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল।
আমাদের ফেইসবুক Link : ট্রাস্ট নিউজ ২৪