বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যানবাহনে একের পর এক অগ্নিসংযোগ ও চোরাগোপ্তা হামলার ঘটনায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশের কর্মকর্তাদের অনেকে এ নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে বিএনপি প্রকাশ্যে আসতে পারছে না। দলটির শীর্ষ ও মধ্যম সারির নেতাদের পাশাপাশি জেলা পর্যায়ের অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাকি নেতারা আত্মগোপনে। এ অবস্থায় তাদের কর্মসূচি পালনের ধরনও পাল্টে গেছে। এ অবস্থায় তাদের কর্মীদের যে মনোভাব দেখা যাচ্ছে, সেটাও আগের তুলনায় অনেক শক্ত বলে মনে করছেন পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা।
রাজনৈতিক কর্মসূচি মোকাবিলা, গ্রেপ্তার এবং জিজ্ঞাসাবাদের যুক্ত কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেছেন, বেশির ভাগ নেতা–কর্মীই বিভিন্ন মামলার আসামি। তাঁদের অনেকে মনে করেন, ধরা পড়লে জেলে তাঁদের থাকতে হবে, নইলে পলাতক জীবন। তাই তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই ঝুঁকি নিতে পিছপা হচ্ছেন না। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বিএনপির নিচের সারির নেতা ও সক্রিয় কর্মীদের যেসব কথাবার্তা পাওয়া যাচ্ছে, তাতেও তাঁদের শক্ত মনোভাব আঁচ করা যাচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, ২৮ অক্টোবরের সংঘর্ষ-হামলা ও বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত ১৩ দিনে ঢাকাতে ৬৫টি গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিস ও প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে ঢাকাসহ সারা দেশে আগুন দেওয়া হয়েছে অন্তত ৮২টি গাড়িতে। বেশির ভাগ ঘটনাই ঘটেছে সন্ধ্যার পর, গভীর রাতে ও ভোরে। এ ঘটনাগুলোর জন্য কারা দায়ী, এ নিয়ে পুলিশ ও বিএনপি পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে। পুলিশ বলছে, হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে বিএনপির নেতা–কর্মীরা চোরাগোপ্তা হামলা ও আগুন দিয়ে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি তৈরি করছেন। আর বিএনপির পক্ষ থেকে আত্মগোপনে থাকা দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছেন, সরকারের লোকজন আগুন দিচ্ছে।
তবে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে কয়েকটি চোরাগোপ্তা হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। গাড়িতে আগুন দেওয়ার সময় হাতেনাতে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও ডিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে বিএনপি রাজপথে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিল। ২৮ অক্টোবর সংঘর্ষে মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর বিরোধী দলের আন্দোলন দমনে সরকার ‘কঠোর’ অবস্থানে চলে যায়। গ্রেপ্তার অভিযানের মুখে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের সক্রিয় নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। এ পরিস্থিতিতে তাঁরা প্রকাশ্যে সভা–সমাবেশের মতো কর্মসূচি পালন করতে পারছেন না। এখন আত্মগোপনে থেকে বিএনপির নেতারা কর্মসূচি দিচ্ছেন।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, যারা অবরোধ দিয়েছে, তারা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করতে অগ্নিসংযোগসহ চোরাগোপ্তা হামলা করছে। তিনি বলেন, পুলিশের প্রচেষ্টার কারণে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা কম ঘটেছে। পুলিশ তৎপর না থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতো।
চোরাগোপ্তা হামলা ও অগ্নিসংযোগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততা ও তাঁদের শক্ত মনোভাব পাওয়ার কথা বলছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ বিষয়ে পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলছেন, বিএনপির সক্রিয় নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে গত ১৫ বছরে অসংখ্য মামলা হয়েছে। কারও কারও বিরুদ্ধে কয়েক শ মামলাও রয়েছে। মামলার খরচ চালাতে গিয়ে স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মী নিঃস্ব হয়ে গেছেন। পুরোনো মামলা তো আছেই, নির্বাচনের আগে এখন নতুন করে মামলা দেওয়া হচ্ছে। এখন ‘যা হওয়ার হবে’ এমন মনোভাব অনেকের মধ্যে দেখা যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিষয়ক লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, এখন যে ঘটনাগুলো ঘটছে, দুই পক্ষই মরিয়া। কেউ কাউকে ছাড় দিতে চাইছে না। এ পরিস্থিতিতে সংঘাত, চোরাগোপ্তা হামলার ঘটনা ও গাড়িতে আগুন দেওয়া এগুলো দেখা যাবে। যদিও এসব কারা করছে, এটা বলা মুশকিল। তবে মানুষ আতঙ্কে আছে। এ পরিস্থিতিটা আরও খারাপের দিকে যাবে।
আমাদের ফেইসবুক লিংক : ট্রাস্ট নিউজ ২৪