সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলায় শিক্ষকের মারধরে নিহত হয়েছে নবম শ্রেণির ছাত্র রাজপ্রতাপ দাশ (১৫)। এঘটনায় রাজপ্রতাপের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। কোনভাবেই মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না তার পরিবার। হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন সহপাঠী ও সহ এলাকাবাসী।
নিহত রাজপ্রতাপের বাবার জেলার কালিগঞ্জ থানায় মামলায় অভিযুক্ত ৫ শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ ৪ জন শিক্ষককে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
তারা হলেন- কালিগঞ্জের নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোনায়েম পাড়, সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল মহিত, সহকারী শিক্ষক অবকাশ চন্দ্র খাঁ ও সহকারী শিক্ষক সিদ্ধার্থ রায় চৌধুরী। মামলার অপর আসামি সহকারী শিক্ষক মনিরুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন।
জানা গিয়েছে, নিহত স্কুলশিক্ষার্থী রাজপ্রতাপ দাশ (১৫) সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের হিজলা চন্ডিপুর গ্রামের মুদি ব্যবসায়ী দীনবন্ধু দাশের ছেলে। সে কালিগঞ্জের নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র।
রোববার (১৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কালিগঞ্জের নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সম্প্রসারিত ভবনের তৃতীয় তলায় ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটছিল তার ৫-৬ জন সহপাঠী। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলো বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র রাজপ্রতাপ দাশ, মুশফিকুর রহমান, জোবায়ের ও রাফি।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অবকাশ চন্দ্র খাঁ ও মনিরুল ইসলাম বিষয়টি দেখতে পান। রাজপ্রতাপ দাশসহ চার জনকে মারধর করেন শিক্ষক অবকাশ চন্দ্র খাঁসহ অন্য শিক্ষকরা। মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া হয় প্রধান শিক্ষকের কাছে। তিনিও মারধর করেন। বিষয়টি রাজপ্রতাপের বাবা দীনবন্ধু দাশকে স্কুলের পক্ষ থেকে জানানো হয়। রাজপ্রতাপ মাথা ও বুকে ব্যথা নিয়ে বাড়ি চলে আসে। বাড়িতে কয়েক বার বমি করার পর জ্ঞান হারিয়ে ফেললে বাড়ির লোকজন দ্রুতই নলতা হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা রাজপ্রতাপের মরদেহ নিয়ে আসে স্কুল ক্যাম্পাসে। শুরু হয় বিক্ষোভ ও ভাঙচুর। শিক্ষকের মারপিটে রাজপ্রতাপের মৃত্যুর অভিযোগে দোষী শিক্ষকের বিচারের দাবি তোলেন হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা।
এদিকে ছেলে শোকে পাগল রাজপ্রতাপে মা মমতা দাশী। হত্যার বিচার চেয়ে অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন।
প্রতিবেশী শ্যামল দাশ জানান, বন্ধুর জন্মদিন পালন করায় শিক্ষকরা মারতে মারতে ছাদের ওপর থেকে নিচে নিয়ে আসে। এর সুষ্ঠু বিচার চান তিনি।
কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন রহমান জানান, নিহতের বাবা দীনবন্ধু দাশ বাদী হয়ে নলতা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচজন শিক্ষকের নামে কালিগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। চারজনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।