বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে পালিত হলো বিশ্ব হার্ট দিবস। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য—‘হূদয়ের যত্নে হূদয়বান হই’। গতকাল শুক্রবার দিবসটি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজনে নানা কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্বে প্রতি বছর ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ হূদেরাগ, স্ট্রোক ও হার্ট ফেইলিউরে মারা যান। অথচ আমরা জীবনাচরণে কিছু পরিবর্তন আনলে এই মরণব্যাধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
হূদেরাগের কারণ হিসেবে চিকিত্সকরা বলছেন, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে হূদেরাগে। যার অন্যতম কারণ তামাক। বর্তমানে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করছে; যা হূদেরাগ পরিস্থিতিকে আরো উদ্বেগজনক করে তুলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি বছর বিশ্বে ১৯ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত হূদেরাগে মৃত্যুবরণ করে। বাংলাদেশে প্রতি বছর ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হূদেরাগে মারা যান। যার ২৪ শতাংশের জন্য দায়ী তামাক। গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডি (জিবিডি) ২০১৯-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের প্রধান চারটি কারণের একটি তামাক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, জীবনাচরণের কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের মতো বিভিন্ন ধরনের মরণব্যাধি থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। তারা বলছেন, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা. ডায়াবেটিস, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও মানসিক দুশ্চিন্তা পরিহার করাসহ কিছু পরিবর্তন সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য খুবই জরুরি।
বিশ্ব হার্ট দিবসে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল (রিজভী)। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) অধ্যাপক ডা. ইউনুছুর রহমান, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, এবারের বিশ্ব হার্ট দিবসকে সামনে রেখে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে শোভাযাত্রা, সেমিনার, ফ্রি হার্ট ক্যাম্প, সচেতনতামূলক পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করা হয়। এছাড়াও ঢাকার বাইরে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের ৪৫টি অধিভুক্ত সমিতিও (অ্যাফিলিয়েটেড বডি) দেশের বিভিন্ন জায়গায় দিবসটি উদ্যাপন করে।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষ্যে ‘হেলদি হার্ট হ্যাপি লাইফ অর্গানাইজেশন’ (হেলো) একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে। এতে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচাতে ‘কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন’—(সিপিআর)-এর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। গতকাল রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। হেলদি হার্ট হ্যাপি লাইফ অর্গানাইজেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু রেজা মো. কাইউম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ইউজিসি প্রফেসর ডা. সজল ব্যানার্জী, হেলোর উপদেষ্টা এবং অতিরিক্ত সচিব (অব.) মশিউর রহমান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হূদেরাগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী, জাতীয় হূদেরাগ হাসপাতালের অধ্যাপক ও হেলোর প্রতিষ্ঠাতা ডা. মহসীন আহমদ প্রমুখ।
আমাদের ফেইসবুক লিংক : ট্রাস্ট নিউজ ২৪