শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় মুলনা ইউনিয়নের চরলাউখোলা বালিয়াকান্দি গ্রামের এক গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে জাজিরা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই গৃহবধূর মামলা দায়েরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ধর্ষকসহ অভিযুক্ত ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতাররা হলেন- ধর্ষণে অভিযুক্ত জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নের চরলাউখোলা বালিয়াকান্দি গ্রামের দুদু মিয়া (৪৫)। শালিসের মাতব্বর ইউপি মেম্বার জসিম সরদার (৩৫) ও মোকসেদ মাদবর (৫০) এবং ধর্ষণের ভিডিও ধারণকারী নয়ন মোড়ল (১৮)।
ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশের পর অভিযুক্তকে ২০টি জুতার বাড়ি দিয়েই এক গ্রাম্যসালিশে বিচার শেষ করা হয় এবং মামলা না করার নির্দেশ দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে গ্রামের মাতব্বররা। মামলা না করার জন্য গৃহবধূর পরিবারেক মানুষিক চাপে রাখে।
বিষয়টি গোপন সূত্রে জানতে পেরে নির্যাতিতা নারীর পাশে আইনি সহায়তায় এগিয়ে আসে জাজিরা থানা পুলিশ। অবশেষে পুলিশের সহায়তায় থানায় এসে এই ঘটনায় গৃহবধূ নিজে বাদী হয়ে বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মামলা দায়ের করেন।
মামলা হওয়ার পর বুধবার রাতেই ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তি দুদু মিয়া, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মেম্বার জসিম সরদার গ্রাম্য সালিশের মাতব্বর মোকসেদ মাদবর ও ধর্ষণের ভিডিও ধারণকারী নয়ন মোড়লকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নে গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার দিকে স্বামীর অনুপস্থিতিতে ঘরে ঢুকে জোরপূর্বক দুদু মিয়া ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করে। এ সময় ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করেন স্থানীয় ফরহাদ, নয়ন মোড়ল, রায়হান সিকদার, আবুল মোড়ল। লজ্জায় বিষয়টি প্রথমে গৃহবধূ ও তার পরিবার চাপিয়ে রাখলেও ভিডিও ছড়াতে থাকে।
পরে স্থানীয় মাতব্বরদের কাছে বিষয়টি বিচারের জন্য গেলে তারা থানায় যাওয়ার পরামর্শ না দিয়ে বরং ঘটনা ধামাচাপা দিতে ৯ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় মোকসেদ মাতব্বরের বাড়িতে ভুক্তভোগী পরিবারের অনুপস্থিতিতে স্থানীয় দরবার-সালিশের আয়োজন করা হয়।
দরবারে উপস্থিত মাতব্বররা ধর্ষণের সেই ভিডিও মোবাইল থেকে ডিলিট করার নির্দেশ দেন। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় দুদু মিয়াকে ৫০টি জুতার বাড়ি মারার রায় ঘোষণা করেন তারা। ঘটনার অপরাধ স্বীকার করে দুদু ক্ষমা চাইলে ৩০টি মাফ করে দিয়ে ২০টি জুতার বাড়ি মারা হয় দুদু মিয়াকে। বলা হয় গৃহবধূর ইচ্ছায় এ ঘটনা হয়েছে। পরে গৃহবধূর পরিবারকে ডেকে এনে বিচার করা হয়েছে জানিয়ে মামলা না করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে।
নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম মিজানুর রহমান জানান, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে মামলা করলে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) মিন্টু মণ্ডলসহ পুলিশ সদস্যদের নিয়ে চারজন আসামিকে গ্রেফতার করি। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গৃহবধূকে আইনি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
আমাদের ফেইসবুক Link : ট্রাস্টনিউজ২৪