অ্যামাজন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং ভয়ঙ্কর এক বনাঞ্চল যা দক্ষিণ আমেরিকায় অবস্থিত। বনটি ৯ টি দেশের প্রায় ৭০ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে। আয়তনের দিক দিয়ে অ্যামাজন বাংলাদেশের তুলনায় ৩৮ গুণ বড়।
সমগ্র পৃথিবীতে যত রেইনফরেস্ট আছে তার অর্ধেকই অ্যামাজন। অ্যামাজন নদীকে ঘিরে এই জঙ্গল প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি বছর আগে সৃষ্টি হয়েছে । এই বনে আছে ৪০ হাজার প্রজাতির প্রায় ৩ হাজার ৯০০ কোটি বৃক্ষ। অ্যামাজনকে পৃথিবীর ফুসফুসও বলা হয়। কারণ পৃথিবীর মোট উৎপাদিত অক্সিজেনের ২০ শতাংশ আসে অ্যামাজন থেকে।
এই বিশাল বনে দেখা যায় বিচিত্র রকমের জীব বৈচিত্র। আছে বিভিন্ন রকমের পাখি, বিভিন্ন জাতের মাছ, সরীসৃপ এবং পোকামাকড়। পাশাপাশি আছে অনেক বিপজ্জনক প্রাণীও। চিতাবাঘ, মাংস -খেকো পিরানহা, বৈদুত্যিক ইল, বিষাক্ত ডার্ট ফ্রগসহ অসংখ্য বিষাক্ত জাতের সাপ। অ্যামাজনের একটি রহস্যময় বিষয় হলো এর গহীনে আছে এক ফুটন্ত নদী। অবিরত ধোঁয়া উঠতে থাকা ফুটন্ত নদী।
যে নদীতে একবার নামলেই মানুষসহ যেকোন প্রাণীর মৃত্যু নিশ্চিত। এ নদীর পানি এতই উষ্ণ যে সেদ্ধ হয়ে যাবে বা গলেও যেতে পারে যেকোন প্রাণী এমনকি মানুষও। নদীর কাছে গেলেই ঝলসে যাওয়ার মতো উপক্রম হয়। নদীটির নাম মায়ানতুইয়াসু। নদীটির দৈর্ঘ্য ৬ কিলোমিটার। এর গভীরতা প্রায় ২০ ফুট। জঙ্গলের এই অংশে কোন জীবজন্তু কে বাস করতে দেখা যায় না।
এই মরণ নদীটি আবিষ্কার করেছেন স্প্যানিশের এক ভূবিজ্ঞানী আন্দ্রে রুজো। তিনি তার দাদুর কাছে প্রথম এই উষ্ণতম নদীটির কথা শুনেছিলেন। তবে তার ভাষ্যমতে, নদীর পানি ফুটন্ত হতে হলে অবশ্যই এর কাছাকাছি আগ্নেয়গিরি থাকতে হবে। তাপের উৎস না থাকলে পানি গরম হওয়ারও কোন সুযোগ নেই। কিন্তু অ্যামাজনের আশপাশে কোনো আগ্নেয়গিরি নেই। সেই রহস্য উদঘাটনের উদ্দেশে রুজো সেই ফুটন্ত নদীর সন্ধানে পাড়ি জমান।
চার মাইল লম্বা ও ধোঁয়া উঠতে থাকা নদী আর নদীর পানিতে পড়ে রয়েছে নানা রকম পশু পাখির মৃতদেহ। বিস্মিত হয়ে রুজো নদীর পানিতে হাত দিতেই এর উষ্ণতা আন্দাজ করতে পারলেন। রুজো একটি গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন নদীর পানি একটু ছুঁতেই তিনি বুঝেছিলেন এই নদী নি:সন্দেহে একটি মৃত্যুর ফাঁদ। তিনি একটি মরা ব্যাঙকে সেই নদীর পানিতে চুবিয়ে দেখলেন মাত্র এক সেকেন্ড সময় লেগেছে সেটি সেদ্ধ হতে।
তিনি জানান বিশ্বে এমন ফুটন্ত পানির নদী বিরল নয় কিন্তু সেই সব নদীর আশেপাশেই আগ্নেয়গিরি রয়েছে যার ফলে নদীর পানি উষ্ণ হয়। অথচ কোন আগ্নেয়গিরি না থাকা সত্ত্বেও কিভাবে অ্যামাজনের এই নদীর পানি এতো উষ্ণ বা ফুটন্ত সেটি অবশ্যই রহস্যজনক।
আমাদের ফেইসবুক Link : ট্রাস্ট নিউজ ২৪