জামালপুরের মেলান্দহে একটি ইটভাটার ধোঁয়ার সঙ্গে নির্গত বিষাক্ত গ্যাসে ঝলসে গেছে গাছ-পালা ও ফসল । উপজেলার নয়ানগর ইউনিয়নের বরুঙ্গা এলাকার মেসার্স বাদশা ব্রিকস নামে ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাসে এই ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
দেখা গিয়েছে, ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাসে পাট ও সবজিখেত, কাঁঠাল ,আমড়া, সুপারি, জলপাই, কলা গাছসহ বাঁশ ঝাড় পুড়ে গেছে।
সেখানকার কৃষকদের অভিযোগ, ১ সপ্তাহ আগে এ বছরের জন্য বন্ধ করার সময়, রাতে বাদশা ব্রিকস ইটভাটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস ছাড়ে। এতে বরুঙ্গা এলাকার ফসলি খেতসহ প্রায় ২০০ গাছপালা ও বাঁশ ঝাড় পুড়ে গিয়েছে। ঝরে পড়ছে গাছের কাঁচা পাতাও।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ জুন রাতে মেসার্স বাদশা ব্রিকস ইটভাটার ইট তৈরির কার্যক্রম এ বছরের জন্য বন্ধ করা হয়। সেদিন হঠাৎই ভাটার চিমনি দিয়ে বিষাক্ত গ্যাস এবং দুর্গন্ধযুক্ত ধোঁয়া বের হয়। এতে ইট ভাটার পশ্চিম পাশের এলাকা বরুঙ্গা ও গাংপাড়া এলাকার গাছপালা ও ফসলি ক্ষেত পুড়ে যায়। গাছের ফল ও কাঁচা পাতা ঝরে পড়ে। বাঁশ গাছের পাতা লাল হয়ে ঝরে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মো. মোস্তফা বলেন, বাদশা ইট ভাটার বিষাক্ত গ্যাসে আমার একটি আমড়া গাছ, দুটি কাঁঠাল গাছ ও বাঁশ ঝাড় ক্ষতি হয়েছে। আমড়া গাছের সব আমড়া পড়ে গেছে। গাছের পাতা পুড়ে গেছে। কাঁঠাল গাছের কাঁচা পাতা পড়ে যাচ্ছে।
শন্তেজ শেখ নামে একজনে বলেন, এক সপ্তাহ আগে রাতে বৃষ্টির সময় ইটভাটার গ্যাস ছাড়ে। আমার পাঁচটি কাঁঠাল গাছ, ছয়টি সুপারি গাছ মরছে।
পশ্চিম বরুঙ্গা গাংপাড়া এলাকার কৃষক মুনছুর আলী বলেন, আমার পাঁচ কাঠা জমির কচুখেত ও পুঁইশাক খেত, আমড়া গাছ, সুপারি গাছ নষ্ট হয়েছে। বাদশা ইটভাটার গ্যাসে এ ক্ষতি হয়েছে। ইটভাটা বন্ধ করার সময় রাতে গ্যাস ছাড়ে। এই গ্যাসে এলাকার কলা বাগান, পাট খেতসহ অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন জামালপুর জেলা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং ফসল, মানুষ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে ইটভাটার অনুমতি দেয়া পরিবেশ আইনবিরোধী। লোকালয়ে ইটভাটা স্থাপন এবং সেখানে কাঠ পোড়ানোর কারণে কৃষি জমির উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।
এ বিষয়ে মেসার্স বাদশা ব্রিকস ইটভাটার ম্যানেজার মো. পলাশ বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এটা শুনেছি। কী কারণে এত ক্ষতি হয়েছে আমরা ঠিক জানি না। ইটভাটার জন্যই যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটাও আমরা সঠিকভাবে বলতে পারছি না।’
অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে ওই ইটভাটার মালিক মো. বাদশা বলেন, ‘আবহাওয়ার কারণে অনেক এলাকায় এমন হয়েছে। এসব নিয়ে আমার কোন চিন্তা নাই। আমার অভিযোগ হলো চাঁদাবাজির অভিযোগ। ধান্দাবাজ লোক রয়েছে, আমার কাছে থেকে কীভাবে চাঁদা নেবে তার পায়তারা করছে। তারা আমাকে ফোন দিয়েছিল। আমি বলেছিলাম আমি ব্যস্ত, তারপরও আমি গিয়েছিলাম। ওখানকার মেম্বারকে বলেছি। তারপরও তারা সাংবাদিকের কাছে গেছে। ওরকম দুই-চার পাঁচটা সাংবাদিক কি আমাদের কাছে নাই!’
এসব কথা বলেই তিনি ফোনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিম মিঞা বলেন, ‘আমার কাছে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ এখনও কেউ করেনি। অভিযোগ করলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আমাদের ফেইসবুক লিংক : ট্রাস্ট নিউজ ২৪