চারদিন ধরে বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) থেকে আবারও উৎপাদনে ফিরেছে রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। গত রোববার (১৬ জুলাই) দুপুরে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর তা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে জানিয়ে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাঈদ একরাম উল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গত রোববার তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। পরে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক্যালস লিমিটেডের প্রকৌশলীরা ত্রুটি মেরামতের কাজ শুরু করেন।
‘বৃহস্পতিবার ত্রুটি মেরামত হলে সকাল পৌনে ১০টায় কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদনের বয়লার সচল হয়। দুপুর ২টা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গেই তা জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে’, যোগ করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাঈদ একরাম।
কেন্দ্রটির তথ্য অনুযায়ী, ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে নির্মিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুটি ইউনিট আছে, যার প্রতিটি ৬৬০ মেগাওয়াটের। দুটি ইউনিটের মধ্যে প্রথম ইউনিটটি গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসে। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে কারিগরি ত্রুটি ও কয়লা সংকটে বন্ধ ছিল প্রথম ইউনিটের উৎপাদন।
২০১০ সালে ভারত ও বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং ভারতের এনটিপিসি লিমিটেডের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) নামে কোম্পানি গঠিত হয়।
এই কোম্পানির অধীনে ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) নামে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়। রামপাল উপজেলার রাজনগর ও গৌরম্ভা ইউনিয়নের সাপমারী কৈ-গর্দ্দাশকাঠি মৌজায় এক হাজার ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ শেষে ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়।
২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই শুরু হয় জমি ভরাট ও সড়ক নির্মাণের কাজ। প্রায় ৯ বছর বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে গেল প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে এ বছরের ১১ জুলাই বয়লার স্টিম ব্লোয়িং স্থাপন করা হয়। এক মাস পরে ১৪ আগস্ট টারবাইন-এ স্টিম ডাম্পিং এবং একদিন পরে ১৫ আগস্ট জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ (ট্রান্সমিশন) শুরু করা হয়। পরে ১৭ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় গ্রিডে বাণিজ্যিকভাবে যুক্ত হয় এখানের বিদ্যুৎ।