ভিডিও আপলোড করেন লাইকি, টিকটকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নিজেকে পরিচয় দেন মডেল, পরিচালকসহ নানাভাবে। এর পর কিশোরিদের অভিনয়ের ফাঁদে ফেলে মডেল বানানোর কথা বলে বাসায় এনে করেন ধর্ষণ। হৃদয় নামের এই যুবক বিভিন্ন প্রলোভনে উঠতি বয়সী পাঁচ কিশোরীকে ধর্ষণ করেছে বলে উঠে আসে পুলিশি বর্ণনায়।
সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ঘটনার শিকার এক ছাত্রী ভাটারা থানায় অভিযোগ দেয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ১৩ ঘণ্টার মাথায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগে বলা হয়, গত ১৬ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কুড়িলে অভিযুক্তের বাসায় চার ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। পুলিশের দাবি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছে ওই অভিযুক্ত।
পুলিশ বলছে, পাশবিকতার শিকার ছাত্রীদের তিনজন কলেজ এবং একজন স্কুলের ছাত্রী। তাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। তারা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় থাকে। অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পর ক্রমিক ধর্ষক (সিরিয়াল রেপিস্ট) বলে দাবি করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, হৃদয় গত ১২ সেপ্টেম্বর বন্ধুদের নিয়ে গাজীপুরের একটি রিসোর্টে পার্টির আয়োজন করে। সেখানে পরিচয়ের সূত্রে দুই কলেজ শিক্ষার্থী মডেল হওয়ার আগ্রহ দেখায়। এর দু’দিন পর হৃদয়ের এক বান্ধবীর মাধ্যমে তারা কুড়িলে হৃদয়ের বাসায় আসে। টিকটকের শুটিং শুরু হওয়ার কথা বলে তাদের ওই বাসার নিচতলার একটি কক্ষে থাকতে দেওয়া হয়। এরপর ওই ছাত্রীদের ওপর পাশবিকতা চালায় সে।
অন্যদিকে, ফেসবুকে ‘টিকটক ও লাইকিতে অভিনয়ের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে’- এমন বিজ্ঞাপন দেখে গত ২০ সেপ্টেম্বর আরও দুই শিক্ষার্থী ওই অভিযুক্তের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদেরও শুটিংয়ের কথা বলে সে নিজের বাসায় থাকতে দেয়। পরদিন সকালে তাদের মধ্যে একজনকে বাসার তৃতীয় তলায় নিয়ে পাশবিকতা চালানো হয়। ওই রাতেই আরেক শিক্ষার্থীর ওপর চলে পাশবিকতা। এভাবে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার শিক্ষার্থীকে নিজের বাসায় আটকে রেখে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে হৃদয়।
পুলিশের গুলশান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ঘটনার শিকার তরুণী ও কিশোরীরা উচ্চাভিলাসী। তারা ভিডিও শেয়ারিং সাইট টিকটক ও লাইকিতে অভিনয়ের চেষ্টা করছিল। কেউ আবার মডেল হতে আগ্রহী। হৃদয় ওই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে। ধর্ষণের পর তাদের নানা ভয় এবং মডেল বানানোর স্বপ্ন দেখিয়ে নিজের বাসায় আটকে রাখা হতো। মডেল হওয়ার স্বপ্নে এবং আতঙ্কে তারা মুখও খুলত না। হৃদয়ের টার্গেট ছিল রঙিন দুনিয়ার স্বপ্নে বিভোর তরুণী ও কিশোরীরা। ভাটারা থানার ওসি মোক্তারুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনার শিকার চার ছাত্রীর একজন থানায় অভিযোগ দিয়েছিল। এরপর পুলিশ ঘটনা তদন্ত করতে গেলে জানতে পারে একজন নয়, সে একে একে চারজনকে ধর্ষণ করেছে।’
তিনি বলেন, কুড়িলের বাড়িটি হৃদয়ের নিজস্ব। পরিচয় গোপন করে মেয়েদের বাড়ির নিচতলায় ভাড়াটে হিসেবে রাখত। সেখানে ঘটনার শিকার চারজনসহ আরও এক তরুণীকে পাওয়া গেছে। তবে ওই তরুণী তার প্রতি কোনো পাশবিকতা হয়নি বলে দাবি করেছেন। অবশ্য একজনের অভিযোগ তদন্তে গেলে আরও তিনজন হৃদয়ের পাশবিকতার বিবরণ দিয়েছেন। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হৃদয়ও তার অপকর্মের কথা স্বীকার করেছে।