
পুরুষের জন্মনিরোধক পিল এখনো না আসার অদ্ভুত কারণ
পুরুদের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর বড়ি নারীদের মতোই এককভাবে জন্মনিরোধ প্রক্রিয়া অবলম্বনের দায় থেকে মুক্তি দিতে পারে। এতে করে প্রতি বছর লাখ লাখ অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ রোধ করা সম্ভব।
বহু বছর ধরে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার কারণ দেখিয়ে পুরুষের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বরাবর এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে । তাতে জন্মনিয়ন্ত্রণের পুরো দায় গিয়ে পড়ে নারীর ওপর। কিন্তু পুরুষের জন্য জন্ম নিরোধকে কেন হরেক ছুতো?
সাল ১৯৬৮ । মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে এক তরুণ নিজের ব্রিবতকর অভিজ্ঞতা খুলে বলে। সিজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসায় থিওরিডেজিন ওষুধে সেবন করতে হত ওই তরুণকে। এক সময় তিনি অবাক হয়ে খেয়াল করেন, তার যৌন জীবন শুকিয়ে যাচ্ছে।
তিন দশক পর ওই ঘটনা নতুন উদ্ভাবনের প্রেরণা হয়ে ওঠে। ওই ওষুধের মত কোনো একটি ওষুধ কি তবে পুরুষের জন্য জন্মনিরোধক বড়ির মত কাজ করবে?
শেষ পর্যন্ত গবেষকরা আরেকটি ওষুধের খোঁজ পেলেন, যা বীর্যপাত কমাতে সক্ষম। ফেনোজিবেনজামিন হল সেই ওষুধ, যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু সুস্থ পুরুষের সেবনের জন্য এসব কোনো ওষুধই উপযুক্ত নয়।
গবেষকরা মূলত উৎসুক ছিলেন শরীরে এসব ওষুধের কার্যকারিতার প্রক্রিয়া জানতে। তাহলে ওই প্রক্রিয়া কাজে লাগিয়ে নতুন বড়ি বানানো যাবে।
অনেক বছর ধরেই গবেষণা চললো, যতক্ষণ না এই প্রক্রিয়া একটি অপ্রত্যাশিত জটিলতার মুখে পড়ল।
পুরুষের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর বড়ি শেষ পর্যন্ত নারীদের এককভাবে জন্মনিরোধ প্রক্রিয়া অবলম্বনের দায় থেকে মুক্তি দিতে পারে। এতে প্রতি বছর লাখ লাখ অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ রোধ করা সম্ভব।
কিন্তু অনেক পুরুষের কাছে ওই অদৃশ্য বীর্যপাত প্রক্রিয়া কোনো আবেদন বহন করল না। তাদের একাংশের কাছে মনে হল, এতে করে পুরুষত্বহীন করা হবে তাদের।
এক পর্যায়ে ওই গবেষণায় অর্থ যোগানো বন্ধ হল, গবেষকরাও পিছু হটলেন।
অবশ্য সম্প্রতি ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালিয়ে চমকে দেওয়ার মত তথ্য পেয়েছেন গবেষকরা।
নতুন এক পিল তারা তৈরি করেছেন যা ঘণ্টা দুয়েকের জন্য শুক্রের সাঁতার কাটার ক্ষমতা বন্ধ রাখবে, কিন্তু পুরুষের হরমোনের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।
এই উদ্ভাবন পুরুষের পিল নিয়ে এতদিনের অচলায়তন ভাঙার সম্ভাবনা রাখলেও মানুষের ব্যবহারে এর অনুমোদন পেতে আরও অনেক সময় লেগে যাবে।
প্রকৃতপক্ষে, একটি কার্যকর বড়ি তৈরি করা কখনই দুস্কর ছিল না।
গত অর্ধ শতকে পুরুষের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির অসংখ্য উপায় প্রস্তাব করা হয়েছে। এরমধ্যে কিছু মানুষের উপর প্রয়োগ করে পরীক্ষার মধ্যে দিয়েও গেছে।
এরপর প্রতিটি চেষ্টাই কোনো না কোনো দেয়ালে গিয়ে আটকেছে। নিরাপদ ও কার্যকর বড়ির বেলাতেও বলা হয়েছে, এর ‘অবাঞ্ছিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে’।
একের পর এক পুরুষের জন্মনিরোধক বড়ি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে এই যুক্তিতে যে সেগুলোতে নারীদের ব্যবহারের জন্মনিরোধক বড়ির মত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো আছে।
কেন পুরুষের জন্য জন্মনিরোধক বড়ি চালু করা এত কঠিন? এই প্রতিবদ্ধকতা কি বৈজ্ঞানিক? না সাংস্কৃতিক?