৫২ বছর পর হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে ফিরে পেলেন নীলফামারীর এক মা। ছোট ভাইয়ের হাত ধরে বাড়ি ফিরলেন তিনি। এতো বছর পর মা-ছেলের সাক্ষাতের মুহূর্ত যেমন এলাকার মানুষকে আনন্দ দিয়েছে, তেমনি কাঁদিয়েছেও।
শমসের আলী ১০ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। এরপর ঘুরেছেন বিভিন্ন এলাকায়। কাজ করেছেন হোটেলে। চালিয়েছেন রিকশাও। এভাবে কেটে গেছে ৫২টি বছর। অবশেষে ছোট ভাইয়ের হাত ধরে বাড়িতে ফিরেছেন তিনি।
শমসেরের বাড়ি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাঙালিপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মণপুর-কদমতলীর বাড়াইশালপাড়া গ্রামে। তার বাবা বজর মামুদ ২০ বছর আগে মারা গেছেন। তার মায়ের নাম সবেজান বেগম।
পরিবারের লোকজন জানান, শমসের দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেন। বাবা ছিলেন দিনমজুর। আট ভাই ও দুই বোনের মধ্যে শমসের বড়। অর্থের অভাবে এক বেলা খেলে আরেক বেলা না খেয়ে থাকতে হতো তাদের। অভাবের তাড়নায় খাবার না পেয়ে ৫২ বছর আগে বাড়ি থেকে রাগ করে বের হন ১০ বছরের শমসের। এরপর দিনাজপুরের পার্বতীপুরে একটি হোটেলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন দুই বছর। সেখান থেকে চলে যান পুরান ঢাকার কলতাবাজার এলাকায়। সেখানে গিয়ে কয়েক বছর হোটেলে কাজ করেছেন তিনি। পরে রিকশা চালান। থাকতেন রিকশার গ্যারেজে।
দুই বছর আগে শমসেরের ছোট ভাই আব্দুল মোতালেব সম্প্রতি ঢাকায় এসে রিকশা চালাতে শুরু করেন। গতকাল পুরান ঢাকায় তাদের দেখা হয়। প্রথমে তারা একে-অপরকে চিনতে পারেননি, কিন্তু কথাবার্তার একপর্যায়ে তাদের মধ্যে পরিচয় হয়। তারা দুজনেই অবাক হয়ে যান এবং তারা আপন ভাই। পরে আব্দুল মোতালেব শমসেরকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন।
সবেজান বেগম বলেন, আমার ছেলে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর আমি অনেক কষ্ট করেছি। আমি অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি, কিন্তু তাকে খুঁজে পাইনি। কিন্তু এতোদিন পর হলেও সৃষ্টিকর্তা আমার ছেলেকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমি খুব খুশি।
বাঙালিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাজাদা সরকার বলেন, সবেজান বেগমকে অনেক দিন ধরেই চিনি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি প্রায়ই পরিষদে এসে জানতে চাইতেন, কেউ তার ছেলের কোনো খোঁজ দিয়েছেন কি না। এতোদিন পর হলেও মা তার ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন। এতে আমরাও আনন্দিত।
চেয়ারম্যান শাহাজাদা সরকার বলেন, সবেজান বেগমের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তারা একটি ছোট্ট ঘরে থাকতেন এবং তাদের জীবনযাপন খুবই কষ্টকর ছিল। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বরাদ্দ দেওয়ায় তারা এখন অনেক সুখী।
শমসের বলেন, আমার পরিবারের সঙ্গে দেখা হয়েছে। ভেবেছিলাম, মা-বাবা কেউই বেঁচে নেই। এতোদিন পর মায়ের সঙ্গে দেখা। জীবনের সবচেয়ে খুশির মুহূর্ত এটি। তবে কষ্ট হচ্ছে বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো না।
আমাদের ফেইসবুক লিংক : ট্রাস্ট নিউজ ২৪