পর্ন তারকাকে ঘুষ প্রদানের মামলায় নিউইয়র্ক ক্রিমিনাল কোর্ট থেকে জামিন লাভের পর আটলান্টায় আরেকটি গুরুতর অপরাধের মামলায় শিগগিরই অভিযুক্ত হতে যাচ্ছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিউইয়র্কের মামলায় ৩৪টি অপরাধের অভিযোগ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দায়ের করা হলেও তারচেয়ে অনেক বেশি অপরাধের অভিযোগ উঠবে আটলান্টায়। আর এই মামলার তদন্ত চলছে গত দুই বছর ধরে।
নিউইয়র্কে ম্যানহাটান ডিস্ট্রিক্ট এটর্নী আলভিন এল ব্র্যাগের মতো এটিরও তদন্তের নেতৃত্বে ফুলটন কাউন্টির প্রসিকিউটর ফ্যানি টি উইলিস। ব্র্যাগের মত উইলিসও কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান। নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দিতে চেয়েছিলেন তদানিন্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এই মামলায় ট্রাম্পের সাথে নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র ও ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী জুলিয়ানিসহ অন্তত দেড় ডজনের মত অভিযুক্ত হবেন বলে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে ৮ এপ্রিল জানা গেছে।
ট্রাম্পের সহযোগী হিসেবে এই মামলায় সম্ভাব্য অভিযুক্তদের মধ্যে জর্জিয়া স্টেট রিপাবলিকান পার্টির প্রধান ডেভিড শ্যাফারও রয়েছেন বলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। সামনের বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপালিকান পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী ট্রাম্পের অধিকাংশ সময় ব্যয় হবে এ দুটি মামলার জন্য। অর্থেরও প্রয়োজন হবে প্রচুর।
উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক এবং সাবেক ফেডারেল প্রসিকিউটর বারবারা ম্যাককুয়েড বলেছেন, ‘অবশ্যই প্রসিকিউটরদের এই কথোপকথন হবে ন্যায়বিচারের স্বার্থে এবং কোনো মামলার জন্য কৌশলগত অবলম্বনের।’
এ মামলায় জর্জিয়া স্টেটের সেক্রেটারি ব্র্যাড র্যাফেন্সপার্গারকে ট্রাম্পের টেলিফোনের রেকর্ড রয়েছে। ট্রাম্প তাকে নির্বাচনের ফলাফল তার পক্ষে ঘোষণার আদেশ দিয়েছিলেন। পুনরায় গণনার নাটক করে ভোট বাড়িয়ে ট্রাম্পকে বিজয়ী ঘোষণার জন্যে চাপ দিয়েছিলেন ওই ফোন কলে। অর্থাৎ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এটি গুরুতর অপরাধের মামলা হিসেবে দাঁড়াচ্ছে। অর্থাৎ ট্রাম্পকে এখন মামলা-মোকদ্দমা নিয়েই সময় কাটাতে হবে।
এদিকে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একের পর মামলার ব্যাপারে আমেরিকানদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বাংলাদেশি আমেরিকানরাও সাবেক একজন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনাকে সহজভাবে নিতে পারছেন না।
খ্যাতনামা অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার তো মনে হচ্ছে আড়ালে চলে যাওয়া ট্রাম্পকে টেনে সামনে আনা হচ্ছে। কারণ, ম্যানহাটান ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণের পর মামলার নতুন তারিখ নেওয়ার ঘটনাটি গত কদিন ধরেই মিডিয়ায় শীর্ষ সংবাদ হিসেবে আসছে। এরপর যদি জর্জিয়া স্টেটের আটলান্টায় আরেকটি মামলা শুরু হয়, তাহলে ট্রাম্পের পোয়াবারো হবে। সামনের বছরের নির্বাচনের প্রচারণায় এগুলো বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে অ্যাটর্নি কর্মকার বলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে এবং ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে যে তাণ্ডব করেছেন সে জন্যে অনেক আমেরিকান ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন। ম্যানহাটানের মামলার পর অনেকে ট্রাম্পের পক্ষে চলে এসেছেন। অর্থাৎ ট্রাম্পকে নির্বাসন থেকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে এই মামলার মধ্য দিয়ে।ডেমক্র্যাটিক পার্টির নেতা এবং খ্যাতনামা অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা সেটাই প্রমাণ করলো। ট্রাম্প অনেক হুমকি-ধামকি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে। আইনি লড়াইয়ে তাকে অংশ নিতে হচ্ছে। এর ফলে নিকট ভবিষ্যতে আর কোনো প্রেসিডেন্ট এমন আচরণে প্রবৃত্ত হবেন না।’
বাংলাদেশি আমেরিকান ডেমক্র্যাটিক ফ্রন্টের প্রেসিডেন্ট খোরশেদ খন্দকার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে আইনের শাসনের দেশ, তা আবারো দৃশ্যমান হলো ট্রাম্পকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে। এখন গোটা জাতি তথা অবশিষ্ট বিশ্ব অধীর আগ্রহে রয়েছেন ট্রাম্পের মতো একজন লোকের বিচার পর্বের শেষ দেখতে।’
আমাদের ফেসবুক লিঙ্কঃট্রাস্ট নিউজ ২৪