৬ রিপাবলিকানের সমর্থনে ইউএস সিনেটে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিচার শুরু হলো। ৯ ফেব্রুয়ারি অপরাহ্নে উভয়পক্ষের বক্তব্য উপস্থাপনের পর ভোটে দেয়া হয় বিচার প্রক্রিয়া সংবিধানসম্মত কিনা তা যাচাইয়ের জন্যে। সেই ভোটে ১০০ সিনেটরের ৫৬ জন বিচারের পক্ষে এবং ৪৪ রিপাবলিকান সিনেটর বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। ৫৬ জনের মধ্যে ৫০ জন হলেন ডেমক্র্যাট। বিচারের পক্ষে ইমপিচমেন্ট ট্রায়ালের ম্যানেজার কংগ্রেসম্যান (ম্যারিল্যান্ড-ডেমক্র্যাট) জেমি রাস্কিন ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের নির্দেশে ও মদদে ক্যাপিটল হিলে জঙ্গি হামলা ও সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ উপস্থাপনে ১৩ মিনিটের ভিডিও ফুটেজ প্রদর্শন করেন। সকল সিনেটরের সাথে সরাসরি সম্প্রচারিত টিভির পর্দায় কোটি কোটি মানুষ তা অবাক বিস্ময়ে অবলোকন করেন।
রিপাবলিকানরা এ বিচারের বিরোধিতায় যুক্তি প্রদর্শন করেছিলেন যে, ক্ষমতায় নেই ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি সাধারণ একজন নাগরিক। তাই তার বিরুদ্ধে সিনেটে ইমপিচমেন্টের ট্রায়াল হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান সাবেক কোন প্রেসিডেন্টকে সিনেটের কাঠগড়ায় উঠানোর ক্ষমতা দেয়নি। ট্রাম্পের আইনজীবীগণের এমন বক্তব্য খন্ডনে অতীতের বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় না থাকা জনপ্রতিনিধিগণের বিচার প্রসঙ্গ আনেন ট্রায়াল ম্যানেজাররা। ঐ জঙ্গি হামলার ভিকটিম শুধু ডেমক্র্যাটরা নন, সকল রিপাবলিকান সিনেটর আর কংগ্রেসম্যানের সাথে ট্রাম্পের রানিংমেট ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয় এ সময়। তবুও ভোটে ৫০ রিপাবলিকান সিনেটরের ৪৪ জনই ট্রাম্পের পক্ষাবলম্বন করায় অনেকেই এই রাজনৈতিক দলের নীতি-নৈতিকতা নিয়ে কড়া সমালোচনা করছেন। শুধু তাই নয়, সামনের বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে এবং ডেমক্র্যাটদের আসন বেড়ে যাবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অভিমত পোষণ করেছেন।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করতে সিনেটের ৬৭ ভোট প্রয়োজন হবে। সেজন্যে ১৭ রিপাবলিকানের সমর্থন দরকার। কিন্তু কার্যত: তা কখনোই সম্ভব হবে না বলে অনেকের ধারণা। অর্থাৎ ট্রাম্পের মত প্রতিষ্ঠিত একজন মিথ্যুক, মাস্তানের পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হবার পথ খোলাই থাকবে।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, ৬ জানুয়ারির আচরণের জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাতি অর্জনকারি কেউই ট্রাম্পের বিচারের বিপক্ষে মত দেননি। তবুও রিপাবলিকান পার্টির বহু পুরনো সিনেটররাও কীভাবে এই বিচারকে সংবিধান বিরোধী হিসেবে নিজেদেরকে উপস্থাপন করলেন-সেটি প্রশ্নের উদ্রেক করেছে সচেতন আমেরিকানদের মধ্যে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। এই প্রথম একজন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এক মেয়াদেই দ্বিতীয় দফায় ইমপিচমেন্ট ট্রায়াল অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ট্রাম্পের আইনজীবীরা যুক্তির অবতারণাকালে দাবি করেন যে, ক্যাপিটল হিলে যারা আক্রমণ চালিয়েছে, তাণ্ডব করেছে, ভাংচুর ও নিরাপত্তা রক্ষীদের ওপর হামলা চালিয়েছে তারা ট্রাম্পের সমর্থক নয়, তারা উচ্ছৃঙ্খল জনতার অংশ, তাই তাদের অপকর্মের দায় ডোনাল্ড ট্রাম্প নিতে পারেন না। এমন বক্তব্য ধোপে টিকেনি, কারণ, ভিডিও ফুটেজেই ট্রাম্পের আহবান রয়েছে, নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে, তাই হামলা না চালালে এই দেশের অস্তিত্ব থাকবে না বলেও ট্রাম্পের মন্তব্য রয়েছে। দিনভর জঙ্গি তৎপরতার পর সন্ধ্যায় টাম্পের আহবান পেয়েই জঙ্গিরা ক্যাপিটল হিল ত্যাগ করেন-সেটিও স্পষ্টভাবে ফুটেজে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাতে ট্রাম্পের অপকর্মের পক্ষে ডেমক্র্যাট-ম্যানেজাররা বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। সে সময় তারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জঘন্যতম অপরাধের ধারাবিবরণী দেবেন। সমর্থকদের উস্কানীর পর ক্যাপিটল হিলে হামলায় উজ্জীবিত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, সেটিও যুক্তির মাধ্যমে ঘটনা পরম্পরায় উল্লেখ করবেন তারা।
৩ নভেম্বরের নির্বাচনে হেরে যাবার পর সেই নির্বাচনে ভোট-ডাকাতির নানা অভিযোগ করেছিলেন ট্রাম্প। অন্তত: ৬০টি মামলা করেছিলেন। কিন্তু কারচুপি, ভোট ডাকাতির পক্ষে কোন ডক্যুমেন্ট উপস্থাপনে সক্ষম না হওয়ায় সবগুলো মামলাই খারিজ হয়ে যায়। এমনকি বিভিন্ন স্টেটের রিপাবলিকান গভর্নররাও সার্টিফিকেট দিয়েছেন যে, নির্বাচনে কোন ধরনেন কারচুপি হয়নি।
ট্রাম্পের তদানিন্তন আইনমন্ত্রী, এফবিআই প্রধান এবং বিচার বিভাগীয় পরিদর্শকরাও দৃঢ়তার সাথে জানিয়েছেন যে, স্মরণকালের সবচেয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে ৩ নভেম্বর। তারপরও ট্রাম্প জনতার রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়ে স্বৈরাচারি কায়দায় চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার প্রচলিত রীতি সম্পন্নকালে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। যা গণতান্ত্রিক বিশ্বে আমেরিকার মান-মর্যাদাকে ধুুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে বলেও উল্লেখ করা হবে শুনানীতে। এমন যুক্তিকে খন্ডনের চেষ্টা চালাবেন ট্রাম্পের আইনজীবীরা বুধবারের এই শুনানীতে।
সিনেট কর্মকর্তারা আশা করছেন রবিবারই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এ বিচার পর্বের সমাপ্তি ঘটবে সিনেটরদের ভোটের মধ্য দিয়ে। সে সময় ডেমক্র্যাটদের সাথে ১৭ রিপাবলিকান যুক্ত হলেই ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করা সম্ভব হবে। এই বিচারের মধ্য দিয়ে মূলত: যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুমহান ঐতিহ্য কঠিন এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করবে বলে মনে করা হচ্ছে। দলের উর্ধ্বে দেশ-এ ব্যাপারটি আমেরিকার রাজনীতিকরা কতটা ধারণ করেন তারও প্রমান মিলবে ট্রাম্পের বিচার প্রক্রিয়াতেই। কারণ, যারা বিচারের জুরিবোর্ডের সদস্য তারাই ছিলেন ঐ জঙ্গি হামলার ভিকটিম।
আমাদের ফেইসবুক Link : ট্রাস্টনিউজ২৪