দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে দূর্ণীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতাসহ বিভিন্ন অনিয়মের জন্য রাজস্ব ও আর্থিক ক্ষতি হওয়ার বিষয়ে ১০ কাউন্সিলরের করা অভিযোগের তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ সরেজমিন এই তদন্ত করেছেন। তবে তদন্তের ব্যাপারে কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
গতকাল সোমবার সকাল ১১ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত সরেজমিনে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখা (গোপনীয়)’র উপ-পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শরিফুল ইসলাম।
এর আগে দিনাজপুর পৌরসভার ১নং প্যানেল মেয়র ও ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবু তৈয়ব আলী দুলাল, ২নং প্যানেল মেয়র ও ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একেএম মাসুদুল ইসলাম, ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জুলফিকার আলী স্বপন, ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী আশরাফ উজ্জামান বাবু, ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল হানিফ দিলন, ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম, ১০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আল মামুন রশিদ, ১১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সানোয়ার হোসেন সরকার, ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর মাকসুদা পারভীন মিনা ও ১০,১১,১২ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর মাজতুরা বেগম পুতুল স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে অভিযোগ করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম কোন রকম রেজুলেশন ছাড়াই এবং ইজারার শর্ত না মেনেই ক্ষমতা বর্হিভুতভাবে ইজারাদারদের বকেয়া টাকা কিস্তি সুবিধা দিয়েছেন। ফলে পৌরসভা প্রায় ৯৮ লাখ ৪ হাজার ৫৬৩ টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এই প্রক্রিয়াতে তিনি পৌর পরিষদের অনুমোদন গ্রহন না করে নিজে লাভবান হয়েছেন। এছাড়াও ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকের নিবন্ধন প্রদানের জন্য আদায়কৃত এক কোটি ৬০ লাখ টাকার কোন হদিস দিতে পারছেন না মেয়র। মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম পৌরসভায় লোক নিয়েগের ক্ষেত্রে চরম অনিয়ম ও দূর্ণীতির আশ্রয় গ্রহন করেছেন। পৌরসভার বিভিন্ন শাখায় শুন্য পদ না থাকলেও তার নিজস্ব কিছু অদক্ষ লোকজনকে দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাষ্টাররোলে নিয়োগ দিয়েছেন। হিসেবের বাইরে প্রতিটি শাখায় এইসব লোকজন কর্মরত রয়েছেন। ফলে পৌরসভার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেটে কোন অর্থ বরাদ্দ না থাকলেও দুস্থ্য ও অসহায় ব্যক্তিদের জন্য পৌরসভার তহবিল হতে প্রায় লক্ষাধিক টাকা প্রদান করেছেন এবং তা চলমান রয়েছে।
পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের এমন দূর্ণীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, নিজে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়া ও স্বার্থসিদ্ধির জন্য দিনাজপুর পৌরসভার রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় আর্থিক ক্ষতি সাধনের জন্য তারা এই অভিযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন অভিযোগকারী কাউন্সিলরবৃন্দ।
অভিযোগকারী ১নং প্যানেল মেয়র আবু তৈয়ব আলী দুলাল বলেন, আমরা ১০ জন কাউন্সিলর পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে কিছু অনিয়ম এবং দূর্ণীতির ব্যাপারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছিলাম। ইতিমধ্যেই বিষয়টি তদন্ত করেছেন। দিনাজপুর পৌরসভা প্রাচীন পৌরসভা, হাটবাজারসহ বিভিন্ন রাজস্ব আয়ের উৎস দিয়ে পৌরসভা পরিচালিত হয়। গত ২টি বছরে দিনাজপুরের হাটবাজার ইজারাদারদের সাথে সখ্যতা করে প্রায় এক কোটি টাকা বকেয়া রেখে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করেছেন এমন অভিযোগ করেছিলাম। আমাদের পরিষদের কোন সিদ্ধান্ত না নিয়েই কিস্তির ভিত্তিতে অর্থ আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে পৌরসভার আর্থিক ক্ষতি করেছেন। এছাড়াও মেয়র বাজেটের অনুমোদন না থাকা সত্বেও নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রায় ১৫ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। উন্নয়নমূলক কাজের এডিবির অর্থ ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৬৪ লাখ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৭৭ লাখ টাকা, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৯৯ লাখ টাকা এবং ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ আসলেও কোন টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি করেননি মেয়র। নিজ খেয়াল-খুশিমত তিনি এই অর্থ ব্যয় করেছেন। রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা,পৌরসভায় অস্থিরতা চলছে। আমাদের বিবেক নাড়া দেয়ায় মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি। মেয়রের সাথে আমাদের কোন দ্বন্দ্ব নেই। আমরা জনগনের সেবা করতে চাই, দিনাজপুর শহরকে আধুনিক শহর গড়তে চাই। মেয়র এডিবির কোন টেন্ডার করেননি তাহলে উন্নয়ন হবে কিভাবে।
অভিযোগকারী ১১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সানোয়ার হোসেন সরকার বলেন, মেয়র যেসব কাজকর্ম করেন তার কোনটার জন্যই পরিষদের কোন ধরনের অনুমোদন গ্রহণ করেননি। নিজ ইচ্ছা ও খেয়ালখুশি মত তিনি পরিষদ চালাচ্ছেন। এতে করে রাস্তাঘাটের উন্নয়নসহ নানান সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নাগরিক। শুধু তাই নয়, নি¤œমানের বৈদ্যুতিক বাল্ব স্থাপনের জন্য নগরবাসীকে অন্ধকারের দূর্ভোগ পোহাতে হয় বলেও জানান তিনি। যান্ত্রিক শাখাটি প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কোনটাই অবৈধভাবে না। আমি করলে লীলা, আর আপনি করলে বিলা, ধন্যবাদ।’ এ কথা বলেই তিনি সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান।
অভিযোগের তদন্তের ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, তদন্তাধীন বিষয়। এ বিষয়ে কোন কিছু প্রশ্ন বা মন্তব্য করা যাবে না।